
বৃহস্পতিবার সকালটা নাজিরহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য ঠিক আর দশটা দিনের মতো ছিল না। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন দুজন সরকারি কর্মকর্তা। কোনো পূর্বঘোষিত পরিদর্শন বা দাপ্তরিক কর্মসূচিতে নয়, তাদের এই আগমন ছিল কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা জোগাতে।
এই উদ্যোগের অগ্রভাগে ছিলেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নাজিরহাট পৌরসভার প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম। ৩৮তম বিসিএসের এই প্রশাসনিক কর্মকর্তা শিক্ষাকে বরাবরই আলাদা গুরুত্ব দেন। সরকারি দায়িত্বের শত ব্যস্ততার মাঝেও সময়-সুযোগ পেলেই তিনি ছুটে যান কোনো না কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, নিজের সন্তানের মতো শিক্ষার্থীদের দেন পাঠদানের অনুপ্রেরণা।
এদিন তার সঙ্গে ছিলেন নাজিরহাট হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাহাব উদ্দিন ও বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য সাংবাদিক এস এম আক্কাছ। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসীম কুমার চৌধুরী অতিথিদের স্বাগত জানান। গার্লস গাইডের সদস্যরা তাদের সালাম ও গার্ড অব অনার প্রদান করে।
কিন্তু এরপরই ঘটে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। প্রধান শিক্ষক অসীম কুমার চৌধুরী জানান, অতিথিরা শিক্ষার্থীদের সম্মান জানিয়ে নির্ধারিত চেয়ারে না বসে, তাদের মতোই ‘সবাই দাঁড়িয়ে’ অনুপ্রেরণামূলক গল্প শোনান।
‘ভালো শিক্ষার্থীর চেয়ে ভালো মানুষ হওয়া জরুরি’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষাজ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার মতো আনন্দ আর কিছুতেই নেই। তোমাদের মতো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সান্নিধ্য পাওয়া অসাধারণ ব্যাপার। এতে তোমাদের শেখাতে যেমন পারছি, আবার এই বিদ্যালয়ে কোনো সমস্যা আছে কি না, সেটাও সরেজমিনে দেখছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। শিক্ষার্থীরা আগামী দিনের ভবিষ্যত। জীবনে ভালো শিক্ষার্থী হওয়ার চেয়ে ভালো মানুষ হওয়া জরুরি। সবসময় বাবা-মার কথা শুনবে, ভালো বই পড়বে এবং স্রষ্টার আদেশ মেনে চলবে। মুঠোফোনের নেতিবাচক দিকগুলো এড়িয়ে চলবে। তাহলেই জীবনে সফলতা আসবে।’
নাজিরহাট হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাহাব উদ্দিন শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘শিক্ষা হচ্ছে আলো। তোমাদের মধ্যে নৈতিকতা, মূল্যবোধ, দেশপ্রেম, নেতৃত্ব ও মানবিকতা খুবই জরুরি। শিক্ষাজীবনের এই মধুর সময় তোমরা অপচয় করো না। সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষা ও বখাটেদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশ তোমাদের পাশে আছে-থাকবে।’
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য সাংবাদিক এস এম আক্কাছ তার বক্তব্যে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নজরুল ইসলামের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, ‘শিষ্টাচার, ক্ষমা ও কর্তব্যপরায়ণতা-এই তিন গুণকে যারা আয়ত্ত করে, তারাই শিক্ষক। তিনি সমাজে লুকিয়ে থাকা অন্ধকার দূর করে আলোকিত সমাজ বিনির্মাণে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মুখ্য ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।’
কর্মকর্তাদের এমন আকস্মিক ও আন্তরিক উপস্থিতিতে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরাও। অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসফিয়া জারিন তার আনন্দে আপ্লুত কণ্ঠে বলে, ‘সরকারের এই বড় কর্মকর্তাদের সব কথা অক্ষরে অক্ষরে পালনের মধ্যদিয়ে আমরা নারী শিক্ষা জাগরণের এ প্রতিষ্ঠানকে একটি মডেল প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করবো।’
অনুপ্রেরণার এই গল্প শোনার পর অতিথিরা বিদ্যালয়ের আঙিনা ঘুরে দেখেন এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বিষয়ক নানা পরামর্শ দেন।