নব্বই দশকের শেষ দিকেও মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে নানা চেষ্টা চালাতে হয়েছে সরকারকে। টেলিভিশনে কার্টুন প্রচার, মেয়েদের জন্য উপবৃত্তি কর্মসূচিসহ নানা চেষ্টায় স্কুলে আনতে হয়েছে মেয়েদের। আর এই সব কর্মসূচির সুফলও মিলছে। বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা আরও ভালো করছে বহু বছর ধরেই। চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায়ও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
পরিস্থিতি এতটাই পাল্টে গেছে যে, রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী ছেলেদেরকে মেয়েদের মত পড়ালেখা করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন।
চলতি বছর এইসএসসির ফলাফলে দেখা যায় ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা আরও ভালো করেছে। এ জন্য মেয়েদের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছেলেদেরকে পড়াশোনায় আরেকটু মনযোগী হতে হবে। তারা বাইরে ঘোরাঘুরি বেশি করে, পড়াশোনায় মনযোগ দিতে চায় না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাচ্চারা দুষ্টুমি করবে, খেলাধূলা করবে। সব কিছুরই প্রয়োজন আছে। শরীর গঠন করতে হবে, সংস্কৃতি চর্চাও করতে হবে। সেই সঙ্গে পড়াশোনাটাও বেশি করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিযোগিতায় মেয়েরা এগিয়ে চলেছে, ছেলেরা পিছিয়ে থাকলে চলবে না।’ যারা পাস করতে পারেনি, তাদেরকে আরেকটু মনযোগী হওয়ার পরামর্শও দেন শেখ হাসিনা।
শিক্ষা বিস্তারে সরকারের চেষ্টার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই মিলে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন, এ জন্যই আমরা দিনের পর দিন আরও ভালো করছি।’ তিনি বলেন, ‘একটা সময় আমাদের ছেলে মেয়েরা ৪০-৫০ শতাংশ পাস করতো, এতেই সবাই খুশি ছিল। কিন্তু আমার খারাপ লাগতো। কেন ছেলে-মেয়েরা ফেল করবে?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে শিক্ষাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছি। শুরুতে সাক্ষরতার হার বাড়িয়েছি। কুদরত ই খোদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে শিক্ষা কমিশন করলাম। কিন্তু বিএনপি সেটা বাতিল করলো। পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় এসে ২০১০ সালে প্রথম শিক্ষানীতি করলাম।’
সরকার বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি দেশকে দারিদ্রমুক্ত করতে প্রধান হাতিয়ার হবে শিক্ষা। শিক্ষার ক্ষেত্রেও নতুন নতুন বিষয় আসছে। এখন তথ্য প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, গবেষণার যুগ। আমরাও সে চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। তিনটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করতেও চেষ্টা করছে সরকার। তিনি বলেন, ‘কর্মসংস্থানও আমাদের কছে গুরুত্বপূর্ণ। ছেলেমেয়েদের এমনভাবে শিক্ষা দিতে হবে যেন দেশ-বিদেশে দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারে।’
বিশ্বের যে কোনো দেশের ছেলেমেয়েদের তুলনায় আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা অনেক মেধাবী মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদেরকে সুযোগ তৈরি করে দিতে হয়। আমরা সব উপজেলায় একটি করে সরকারি কলেজ, প্রতি জেলায় হয় সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা আধুনিক প্রযুক্তি ও জ্ঞানসম্পন্ন হবে।’