
নগদ টাকা, চেক-এফডিআর, ফেনসিডিলসহ আটক চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস।
চট্টগ্রাম : প্রায় চার কোটি টাকা (নগদ-চেক) ময়মনসিংহের বাড়িতে রেখে আসতে যাচ্ছিলেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস। লাগেজ-ভর্তি টাকা-চেক-এফডিআর নিয়ে শুক্রবার উঠেন ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেসে।
ট্রেনটি ভৈরব স্টেশনে পৌঁছলে শুরু হয় রেল পুলিশের রুটিন-তল্লাশি। সিটের উপরে থাকা লাগেজটি তল্লাশি করতে চাইলে প্রথমে বাধা দেন সোহেল বিশ্বাস। নিজের কর্মস্থলের পরিচয় দিয়ে লাগেজ তল্লাশি থেকে পুলিশকে বিরত রাখতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। শেষতক লাগেজটি খুলে রেল পুলিশের চক্ষু চড়কগাছ।
থরে থরে সাজানো ৫শ’-১ হাজার টাকার বান্ডিল সব। সর্বমোট ৪৪ লাখ ৩৩ হাজার টাকা নগদ। এরপর একে একে বেরিয়ে আসে চেক, এফডিআর।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এক কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক এবং স্ত্রীর নামে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার এফডিআর এবং এ সংক্রান্ত নথি। এসময় উদ্ধার করা হয় ১২টি ফেনসিডিল।
সোহেল রানা বিশ্বাসকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মজিদ।
তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিওিতে আজ দুপুর ১টার দিকে ভৈরব স্টেশনে তল্লাশির সময় চট্টগ্রাম থেকে ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের, ঘ, বগির আসন নং ১৩-১৫, ট্রলি ব্যাগ থেকে নগদ ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার অবৈধ টাকা ও ১২ বোতল ফেনসিডিলসহ রেলওয়ে পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস।
এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক ও তার স্ত্রীর নামে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা এফডিআর সংক্রান্ত নথি উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি)এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে একুশে পত্রিকাকে জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস পুলিশের কাছে এসব তার অবৈধ উপার্জিত অর্থ বলে স্বীকার করেছেন। এসব অর্থ, চেক-এফডিআর এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সোহেল রানা ময়নমনসিংহের গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন বলেও পুলিশের কাছে স্বীকার করেন।
ভৈরবের স্থানীয় সাংবাদিক ফজলুল হক বাবু শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে একুশে পত্রিকাকে জানান, আটক সোহেল রানা বর্তমানে ভৈরব থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। রেল পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এগুলো তার নিজের বলে স্বীকার করলেও পরবর্তীতে উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের একেক ধরনের তথ্য দিচ্ছেন তিনি। বলছেন, এই টাকা তার নয়, কারা পুলিশের উর্ধ্বতন কোনো এক কর্মকর্তার। তিনি কেবল বহন করছেন। তবে এফডিআরে স্ত্রীর নাম থাকায় তা অস্বীকার করতে পারেননি। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার কথাবার্তায় অস্বাভাবিকতা এবং মাদকাসক্তির বিষয়টি ফুটে উঠে।

স্ত্রী হোসনে আরা পপির সঙ্গে সোহেল রানা বিশ্বাস, যার নামে আড়াই কোটি টাকার এফডিআর করেন তিনি।
সোহেল রানা বিশ্বাসের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি চেক বইও উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মানি লন্ডারিং এবং মাদক আইনে দুটি পৃথক মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান সাংবাদিক ফজলুল হক বাবু।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের বেসরকারি এক কারাপরিদর্শক একুশে পত্রিকাকে জানান, গ্রামের বাড়ি যাওয়ার কথা বলে সোহেল রানা দুইদিনের ছুটি নেন। সোমবার তার কর্মস্থলে যোগ দেয়ার কথা ছিল।
তিনি জানান, ১০ মাস আগে তিনি চট্টগ্রাম কারাগারে যোগ দেন। এর আগে খাগড়াছড়ি কারাগারে কর্মরত ছিলেন। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি এত টাকার কীভাবে মালিক হলেন তা রীতিমত বিস্ময়কর। সোহেল রানাকে চট্টগ্রাম কারা-অভ্যন্তরে নানামুখি বাণিজ্যের হোতা উল্লেখ করে ওই কারাপরিদর্শক বলেন, তার কারণে কারাগারের ভেতরে আমাদের শুদ্ধি আনয়নের কাজ ব্যাহত হচ্ছিল।
সোহেল রানা বিশ্বাসের বাড়ি ময়মনসিংহ শহরের ১১৯ নং আর কে মিশন রোড। তার পিতা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলহাজ্ব জিন্নত আলী বিশ্বাস। তার স্ত্রী নাম হোসনে আরা পপি। ২০০০ সালে তিনি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিতে যোগদান করেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়।
একুশে/এটি