রাকীব হামিদ : আমিনুল ইসলাম তৃণমূল থেকে উঠে আসা নেতা। তিল তিল করে আজকের পর্যায়ে এসেছেন। কর্মী থেকে নেতা হয়েছেন। ‘৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরের দেওয়ানবাজার ওয়ার্ড ছাত্রলীগের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতিতে তার হাতেখড়ি। চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগে নেতৃত্ব দিয়েছেন মেধার স্ফুরণ ঘটিয়ে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে ছাত্ররাজনীতিতে আলোকোজ্জ্বল হয়ে উঠেন আমিনুল ইসলাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন শুধু নয়, পর পর তিনবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সর্বশেষ তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ছিলেন। ছাত্ররাজনীতিতে ইতি টানার পর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ কমিটির সহ সম্পাদক নিযুক্ত হন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পর পর তিন কমিটিতে। বলাবাহুল্য, অপেক্ষাকৃত তরুণ বয়সে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন তিনি। বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ প্রচার সম্পাদক।
বক্তৃতাদানে পটু বলে তাঁকে আওয়ামী রাজনীতির বাগ্মী বলা হয়। প্রতিদিন কোনো না কোনো টেলিভিশনের টক শোতে সরব থাকেন তিনি। আরবী, হিন্দি, উর্দু, বাংলা, ইংরেজিসহ না বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন। পড়াশোনা করেন বিস্তর। নিয়মিত পড়েন বলেই ভালো বলেন। যুক্তি-তর্কে পরাস্ত, পরাভূত করেন বিরোধীপক্ষকে।
সম্প্রতি তারকাদের নিয়ে চট্টগ্রাম অবস্থানকালে রাজনীতি ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে একুশে পত্রিকার সাথে কথা বলেছেন আমিনুল ইসলাম। বিশেষ সাক্ষাৎকারে আওয়ামী রাজনীতির মেধাবী এই নেতা জানিয়েছেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় সময়ের ব্যাপার। শতভাগ আত্মবিশ্বাসী নির্বাচনী প্রচার-সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত আমিনুল ইসলাম বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর পর নৌকার পক্ষে সারাদেশে যে জোয়ার দৃশ্যমান তা অভাবনীয়। এই জোয়ার প্রমাণ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের বিজয় সময়ের ব্যাপার।
তিনি আরো বলেন, মানুষ এখন প্রতিদিনই সচেতন হচ্ছে। আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হচ্ছে না। গত ১০ বছরে মানুষ বুঝতে পারছে কেন শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতৃবৃন্দের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়েছেন। তরুণ প্রজন্ম থেকে শুরু করে অনেকে অনুধাবন করত পারছেন গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নাই। শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন নিয়ে ভাবেন না, আগামী প্রজন্ম নিয়ে ভাবেন।
ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ও এক সময়ের আওয়ামী লীগ নেতা ড. কামাল হোসেনের সাম্প্রতিক ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও জামায়াতের সাথে জোট গঠনের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, হিটলারও কোনোদিন কারো সাথে ভয়ংকর দাম্ভিকতা নিয়ে খামোশ শব্দটা বলেছেন কি না আমার জানা নেই। যে মানুষের আচরণে ঔদ্ধত্য তাকে দিয়ে আদৌ দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব কিনা এই ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে।
রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণকে ফেরত ও জামায়াতসঙ্গ- ড. কামালের এই বক্তব্যকে স্ববিরোধী বলছেন আমিন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, যারা রাষ্ট্রকেই স্বীকার করেনি তাদের সাথেই তিনি জোট করেছেন। তাহলে মালিকানা ফেরত দেয়ার বিষয়টি আসলো কোথা থেকে?
এদিকে প্রতিদিনই নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় হামলা ও নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকার অভিযোগ করে আসছে ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি নেতারা। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলামের কাছে। তাঁর মতে, আওয়ামী লীগের বিজয়ের সম্ভাবনা দেখেই বিএনপি এসব অভিযোগ করছে। তবে সব নির্বাচনেই কম বেশি কিছু বিতর্ক থাকার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।
আমিনুল ইসলাম বিএনপির দিকে পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর প্রথম দিনেই বিএনপি জামায়াতের হামলায় নোয়াখালীতে যুবলীগ নেতা হানিফ, ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের এক কর্মী মারা গেলেন। যেখানে প্রথম দিনে হামলার শিকার হলাম এবং দুইজন কর্মীকে হারালাম তাহলে হামলাটা কারা আগে করলো?
আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের উপর এসব হামলার পেছনের কারণটাও জানিয়েছেন আমিনুল ইসলাম। তিনি মনে করেন, জনমত জরিপে বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা এতো বেশি প্রমাণ হয়েছে যে, ৭৫ ভাগ মানুষ তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায়। সমস্ত সার্ভে ও মানুষের পূর্বানুমান বিএনপিকে দিশেহারা করে দিয়েছে। এজন্য তারা সকাল-বিকাল মিথ্যার বেসাতি ছড়াচ্ছে।
নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে রাজনৈতিক সহিংসতার সম্ভাবনা তত বাড়ছে। সাধারণ মানুষের মনেই এমন শঙ্কা বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলামও বিএনপি জামায়াতের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত অনুধাবন করছেন। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত সহিংসতার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। আমাদের কাছে উপরে আল্লাহ, নীচে মানুষ ছাড়া কিছুই নেই। সে মানুষের ওপর আমাদের আস্থা আছে। মানুষই বিএনপি-জামায়াত জোটের ষড়যন্ত্র ভেস্তে দিবে।
শোবিজ তারকাদের নিয়ে আওয়ামী লীগের দেশজুড়ে প্রচারণা। চট্টগ্রামেও নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছেন তারাকারা। নির্বাচনে এটি আওয়ামী লীগকে বাড়তি কোনো সুবিধা দেবে কিনা এমন প্রশ্নে নির্বাচনী প্রচার সেলের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করা আমিনুল ইসলাম বলেন, কোনো তারকাকে আমরা প্রচারণায় আসতে বলেছি কিনা যাচাই করুন। তাদের প্রত্যেকেই চেতনা ও আদর্শের কারণে এসেছে। আজকে শুধু তারকা নয়, লেখক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী এমনকি ব্যবসায়ীরাও মনে করছে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই।
তারাও উপলব্ধি করতে পারছে শেখ হাসিনা যদি ক্ষমতায় না থাকে, তাহলে দেশের বিকাশমান সংস্কৃতির অগ্রযাত্রা রুদ্ধ হয়ে পড়বে। কেউ এমপি-মন্ত্রী হওয়ার জন্য এখানে আসে নাই। চেতনার টান, প্রাণের টানে এক হয়েছে বলেই তারকারা শেখ হাসিনার প্রচারণায় নেমেছেন। কোনো দেশের এরকম সমস্ত মানুষগুলো একজন মানুষকে কেন্দ্র করে একাট্টা হয়নি, এবারই হয়েছে। এটাই ক্যারিশমা অব শেখ হাসিনা।
সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনটি জামায়াতের ঘাঁটি বলে জনশ্রুত। এই আসনটি পুনরুদ্ধারে জামায়াত মরিয়া হয়ে উঠবে এটিই এখন ভোটের মাঠে প্রচলিত কথা। এ বিষয়ে এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করা আমিনুল ইসলাম বলেন, জামায়াত কেন, সব দলই যখন নির্বাচন করে তারা তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করে। কেউ কিন্তু মাঠে পরাজিত হতে নামে না, সবাই জেতার জন্য নামে। তারা তাদের চেষ্টা করবে, আমরা আমাদের চেষ্টা করবো। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, জামায়াত দীর্ঘদিন ধরে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। কিন্তু গত ১০ বছরে সারা বাংলাদেশে উন্নয়নের যে ঢেউ আছড়ে পড়েছে তা সাতকানিয়াতেও এসে লেগেছে। আমরা সবাই মিলে এই আসনটি জামায়াত থেকে উদ্ধার করতে চেষ্টা করছি।
এই আসনে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে আমিনুল ইসলামের। মনোনয়ন পাবার তীব্র সম্ভাবনা থাকার পরেও মনোনয়ন দেয়া হয়েছে জামায়াত-কানেকশানের অভিযোগ থাকা একজনকে-এই সমীকরণ মেলাতে বলা হয় আমিনুল ইসলামকে। তিনি জানান, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত নেই। দল হয়ত মনে করেছে আমাকে সেখানে মনোনয়ন দিলে এমপি হতাম। কিন্তু আমাকে যদি প্রচারের অন্য কাজে লাগালে আমি হয়তো বেশি ভূমিকা রাখতো পারবো। নদভীকে নমিনেশন দিলে এলাকায় আমার চেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারেন- এই বিবেচনায় দল হয়তো তাকে মনোনয়ন দিয়েছে।
ব্যক্তি আমিনের নমিনেশনের চেয়ে শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী হওয়াকেই মুখ্য মনে করেন আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি এমপি হবার স্বপ্ন নিয়ে রাজনীতি করি নাই। একটা আদর্শকে বুকে নিয়ে রাজনীতি করেছিলাম। আমার মূল টার্গেট আমার আদর্শের দলটা যেনো রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকে। শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী হবার প্রশ্নে ব্যক্তি আমিনের নমিনেশন প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি খুবই গৌন।
এক প্রশ্নের জবাবে আমিনুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে দল যাকে (নদভী) সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে নমিনেশন দিয়েছে তিনি অতীতে জামায়াতের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। উনি পরে বুঝতে পেরেছেন ভুল ছিল। তাই নিজেকে শোধরানোর জন্য হয়তো আওয়ামী লীগে এসেছেন। এটা ভবিষ্যতই প্রমাণ করবে।
নেজাম উদ্দিন নদভীর পক্ষে প্রচারণা চালানো প্রসঙ্গে আমিনুল ইসলাম বলেন, নদভী আমার নীতি মেনেই আওয়ামী লীগে এসেছেন, আমি তো উনার নীতিতে যাইনি। আর আমি তো জামায়াতের প্রার্থীর জন্য ভোট চাচ্ছি না। উনি রিয়েলাইজ করে এসেছেন তার আগের রাজনীতি ভুল ছিল। এখানে আদর্শটাই মূল, ব্যক্তি নয়। কাজেই নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করাই আমাদের লক্ষ্য।
একুশে/আরএইচ
ছবি ও ভিডিও : আকমাল হোসেন