শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করবে ‘রোবট ফোর্স’

প্রকাশিতঃ ১৯ জুন ২০১৯ | ২:০১ অপরাহ্ন

চট্টগ্রাম : আগুন থেকে মানুষকে বাঁচানো এবং অগ্নিকাণ্ডের স্থানে দ্রুত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাঠাতে ‘রোবট ফোর্স’ উদ্ভাবন করেছেন চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের অষ্টম পর্বের ছাত্র লোহাগাড়ার জাহেদ হোসেন।

অগ্নিকাণ্ড থেকে মানুষকে বাঁচাতে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসের জন্য এটি উদ্ভাবন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার ছেলে ক্ষুদে বিজ্ঞানী জাহেদ হোসেন নোবেল।

সম্প্রতি ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্কিল কম্পিটিশনের চূড়ান্ত পর্বে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পক্ষে জাহেদ হোসাইন নোবেলের উদ্ভাবিত প্রজেক্টটি ৩য় স্থান পায়। এর জন্য তার হাতে জাতীয় পুরষ্কার তুলে দিয়েছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

এসময় একই বিভাগের ছাত্র ফাহিম জাওয়াদ ও ইমতিয়াজ বিন সোয়াইব তার প্রজেক্টে সহযোগি ছিলেন। তার প্রথম উদ্ভাবিত প্রজেক্ট ছিল ‘লাইফ সেভিং ড্রোন’। চূড়ান্ত পর্বে মোট ৫৪টি প্রজেক্ট উপস্থাপন করা হয়।

বাংলাদেশ রোবট ফোর্স প্রজেক্টটি ছাড়াও মেলায় অটো স্ট্রিট লাইট প্রজেক্ট নিয়ে এসেছে ফটিকছড়ি কলেজের তিন শিক্ষার্থী। কলেজের বিজ্ঞান শাখার একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রুকনুজ্জামান সিদ্দিকী, মোস্তফা ইয়াসির ও মো. ইব্রাহিম এই প্রজেক্টের উদ্ভাবক।

উদ্ভাবকরা জানায়, এই অটো স্ট্রিট লাইট রাস্তায় সড়কবাতি হিসেবে ব্যবহার হবে। যেটি সূর্যের আলো নেভার সাথে সাথে অটো (স্বয়ংক্রিয় ভাবে) জ্বলে উঠবে। আবার সূর্যের আলো পেলেই এ লাইট অটো বন্ধ হয়ে যাবে। মূল কথা, এটি অন-অফ করতে কোন ধরনের সুইচের প্রয়োজন হবে না।

‘রোবট ফোর্স’ এর কার্যক্ষমতা প্রসঙ্গে জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত ক্ষুদে বিজ্ঞানী নোবেল জানান, রোবটটির বহন ক্ষমতা ১৮ কেজি। এছাড়া অগ্নিকাণ্ডের স্থানে রোবটটি প্রয়োজনীয় খাবার, ওষুধ ও মাস্ক নিয়ে যেতে পারবে। রোবটটি নিজেই অগ্নিকাণ্ডে সৃষ্ট কালো ধোঁয়া কুলিং সিস্টেম ব্যবহার করে ফিল্টার করে দেবে। তাছাড়া রোবটটি রিমোট কন্ট্রোলারের সাহায্যে এক কিলোমিটার দূরত্ব থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন একজন ফায়ারম্যান।

ফায়ার সার্ভিসের জন্য  রোবটটি উদ্ভাবন করা হয়েছে জানিয়ে জাহেদ বলেন, মূলত ফায়ার সার্ভিসের জন্য রোবটটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। রোবটটিতে অন্ধকারে আলোর সুবিধার্থে দুটি হেড লাইট এবং মনিটরিংয়ের সুবিধার্থে লাইভ ক্যামেরা ও জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম সংযোজন করা হয়েছে। আর পানি ছিটানোর জন্য লাগানো আছে নল।

জাহেদ হোসেন বলেন, চালানোর সুবিধার্থে রোবটটির নিচের অংশে ৬টি চাকা লাগানো আছে। যার ফলে রোবটটি উচুঁ-নিচু জায়গায় ব্যবহারের উপযোগী। আর সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে ট্যাংকের আদলে রোবট। যেটি বহুতল ভবনের সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠে আগুনের কাছে পৌঁছে যাবে। ওই সময় রোবটটি পরিচালনাকারী ফায়ারম্যান রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে পানি ছিটিয়ে কিংবা ফায়ার এঙিটিংগুইশার ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করবেন।

ক্ষুদে এই বিজ্ঞানী বলেন, আগুন নির্বাপন ছাড়াও রোবটটি কক্ষে আটকে থাকা মানুষকে হিউম্যান ডিটেক্ট সেন্সরের মাধ্যমে শনাক্ত করবে।

দেশীয় প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিতে এই রোবট তৈরি করা সম্ভব। এই রোবট ফোর্স তৈরিতে উপকরণ হিসেবে মটর ড্রাইভার, হিউম্যান ডিটেক্ট সেন্সর, স্মোক সেন্সর, কুলিং ফ্যান, ফায়ার এঙিটিংগুইশার, পাইপ নজল, লাইট, হাই তার্ক গিয়ার মটর এবং রোবটিক আর্ম ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়েছে। এটি বাংলাদেশের বাজারে আনতে মাত্র ১০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন হবে।

প্রজেক্টের উদ্ভাবকরা জানিয়েছেন, বাণিজ্যিকীকরণের জন্য রোবটটি তৈরি করতে চাইলে ৩ লাখ টাকার মতো খরচ হতে পারে। আর এটির বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে বিশাল অংকের অর্থ আয় করা সম্ভব।

একুশে/এসসি