বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আইনের মারপ্যাঁচে মারা গেল ডলফিনটি!

প্রকাশিতঃ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ১:২২ অপরাহ্ন


কক্সবাজার: আইনের মারপ্যাঁচে পড়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের তীরে বিনাচিকিৎসায় একটি ডলফিন মারা গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গতকাল সোমবার বিকেল ৪টার দিকে আহত অবস্থায় ডলফিনটি হিমছড়ি দরিয়ানগর এলাকায় তীরে আসলে সেভ দ্য নেচার অব বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান সায়েম সংগঠনের কর্মীদের নিয়ে সেটিকে উদ্ধার করেন।

বিষয়টি তারা তাৎক্ষণিক পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্য নেচার অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদকে অবহিত করেন। এরপর ডলফিনটিকে রক্ষায় সরকারের কোন দপ্তরের সহযোগিতা পাননি বলে মোয়াজ্জেম হোসেন অভিযোগ করেছেন একুশে পত্রিকার কাছে।

তিনি বলেন, ইঞ্জিনচালিত জলযানের প্রপেলারে আঘাত পেয়ে ডলফিনটির নাক দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছিল। সামুদ্রিক প্রাণী সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা জেলার বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেছি, কিন্তু ডলফিনটি রক্ষায় কারো নূন্যতম দায়িত্ববোধ ও আগ্রহ দেখতে পেলাম না। পরিবেশ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর ও বন বিভাগের আইনের মারপ্যাঁচে আহত সামুদ্রিক প্রাণীটিকে বাঁচাতে পারলাম না। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ডলফিনটি মারা যায়।

সেভ দ্য নেচার অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদ বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ডিডি নুরুল আমিন জানালেন, তাদের করার কিছু নাই। আপনি মৎস্য অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করেন তারা চাইলে কিছু করতে পারে। যোগাযোগ করলে মৎস্য অধিদপ্তরের ডিএফও খালেক বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ২০১২ অনুসারে এটি বন বিভাগের দায়িত্ব আমার করা কিছু নেই।

‘এরপর কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের ডিএফও হুমায়ুন কবির জানালেন, যদিও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুসারে ডলফিন রক্ষা আমাদের উপরে বর্তায়। কিন্তু আইনে সামুদ্রিক প্রাণী ব্যবস্থাপনার বিষয়ে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। বনভূমি ও বন্য প্রাণী নিয়ে আমরা কাজ করলেও ডলফিন সুরক্ষার বিষয়ে আমাদের কিছুই করার নাই।’

তিনি আরো বলেন, তবে ঘটনাস্থলে এসিএফকে পাঠানোর কথা বললেন কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের ডিএফও। অবশেষে বন বিভাগ ও মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা রাত সাড়ে ৯ টার দিকে হাজির হলেন। সামুদ্রিক প্রণী রক্ষার চিকিৎসক রাতে হাজির হলেও ততক্ষণে ডলফিনটি মরে পচতে শুরু করেছে। তারা চিকিৎসা দিতে জানেন না নাকি, জানেন শুধু মরে গেলে পোস্টমর্টেম করতে। তারা তাই করেছেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের ডিএফও হুমায়ুন কবির একুশে পত্রিকাকে বলেন, ডলফিনটিকে আহত অবস্থায় নয়, মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। আমাদের অনুরোধে উপজেলা পশু সম্পদ অফিসের একজন কর্মকর্তা এসে ডলফিনটির ময়নাতদন্ত করেন, তিনি জানান অন্তত ১২ ঘন্টা আগে ইঞ্জিনচালিত জলযানের আঘাতে ডলফিনটির মৃত্যু হয়েছে।

সেভ দ্য নেচার অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদ একুশে পত্রিকাকে বলেন, সামুদ্রিক প্রাণী সুরক্ষার দায়িত্ব যাদের উপর বর্তায় প্রতিটি সরকারী দপ্তরের সিনিয়র কর্মকর্তাদের সাথে আমার ফোনালাপের কথোপকথন রেকর্ড আছে। যেসব কথার ভাঁজে ভাঁজে তাদের দ্বায়িত্বহীনতা ও আইন দেখিয়ে সটকে পড়া সহ নিজেদের ব্যর্থতার চিত্র ফুটে উঠেছে।