বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর ‘চিঠি’ কফিনে করে নিয়ে যেতে চান সুজন!

প্রকাশিতঃ ১০ মার্চ ২০২০ | ১০:১৮ অপরাহ্ন

১৯৯০ মালে বাবরি মসজিদ ইস্যুতে সৃষ্ট দাঙ্গাএলাকা পরিদর্শনে আসেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সাথে আমির হোসেন আমু, প্রয়াত নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ও খোরশেদ আলম সুজন (সামনের সারিতে বামে)

চট্টগ্রাম : ১৯৭০ সালে ৯ম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে বাঙালি সংস্কৃতি পদদলিত করে পাকিস্তানি ভাবধারা ও সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার জন্য ছাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল ‘পাকিস্তান : দেশ ও কৃষ্টি’ শীর্ষক পাকিস্তানি সংস্কৃতি। আজকের মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন তখন নবম শ্রেণীর ছাত্র। মৌলবাদি সংস্কৃতি, শক্তির বিরুদ্ধে সেই যে মাঠে নামা, রাজনীতির নানা পদ, কন্টাকাকীর্ণ পথ মাড়িয়ে তিনি এখনো সেই মাঠে, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির তিমিরে।

দীর্ঘ ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে রাষ্ট্রীয় পদ-পদবী, এমপি-মন্ত্রী কিছুই পাননি তিনি । প্রাপ্তির ঝুলিতে আছে কেবল মানুষের ভালোবাসা, বঙ্গবন্ধুকন্যার স্বাক্ষরযুক্ত একটি চিঠি। বঞ্চনার নানা বাঁক পেরিয়ে সেই চিঠিটাই এখন তাঁর অন্যতম সান্ত্বনা, যেই চিঠিটা কফিনে করে কবরে নিয়ে যেতে চান সুজন।

মেয়র নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর মঙ্গলবারই প্রথম একুশে পত্রিকার কাছে মুখ খুললেন সুজন। বঞ্চনার ‘চারপাশ’ বলতে গিয়ে সুজন জানালেন এমনই ইচ্ছার কথা। বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় পদপদবী পাইনি, কিন্তু কর্ম থেকে কেউ আমাকে দূরে রাখতে পারেনি। প্রতিদিন মানুষের জন্য কাজ করছি। হৃদয় পেতে শোনার চেষ্টা করি তাদের ক্ষরণের গল্প, দগ্ধতার গল্প। আমার বয়স এখন ৬৩’র ঘরে। হয়তো আর ক’টা বছর। সাধারণ মানুষের কথাগুলো এভাবেই ফেরি করে চলে যাবো।’

সেই চিঠির গল্প শোনাতে গিয়ে সুজন বলেন, ‘নেত্রীর প্রতি আমার কোনো অভিমান বা কষ্ট নেই। তিনি আমাকে তিনবার মনোনয়ন দিয়েছেন। একবার (২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর) চিঠিও দিয়েছেন। ১৭ নভেম্বর ২০০৮ নেত্রীর স্বাক্ষরিত মনোনয়নের চিঠি হাতে নিয়ে আমি নির্বাচনের মাঠে নেমে পড়ি উচ্ছ্বসিত, উদ্বেলিত নেতাকর্মীদের সাথে। তখনই হঠাৎ এক অদৃশ্য ইশারায় আমাকে থামিয়ে দেয়া হলো। রাতারাতি ছিনতাই হলো সেই মনোনয়ন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও একই ঘটনা। আমার নামে টাইপ করা মনোনয়ন-চিঠি কম্পিউটার থেকে গায়েব হয়ে যায়।’

২০০৮ সালের ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত চট্টগ্রাম-১০ আসনে সুজনের মনোনয়নপ্রাপ্তির চিঠি

‘২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নেত্রী কাদের ভাইকে (আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক) বলেছেন সুজনকে মনোনয়নের চিঠি দিয়ে দাও। আমাকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আবারো সেই অদৃশ্য শক্তির জোরে রাতারাতি আমার মনোনয়ন চুরি হয়ে যায়। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। আমি হয়তো যোগ্য নই, তাই মনোনয়ন পাইনি। ভাগ্যবিধাতাকে মেনে নিয়েছি। আল্লাহর ইচ্ছা থাকলে এমন হওয়ার কথা নয়- ২০০৮ সালে মনোনয়নের চিঠি হস্তগত হওয়ার পরও মিরাকলি চেঞ্জ কেন?’

‘যাক, ওইসব আর ভাবি না। গতকাল থেকে রেজাউল ভাইয়ের (আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী) জন্য মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছি, ঘামজড়ানো ক্যাম্পেইন করছি। ক্লান্ত হচ্ছি। এই অবস্থা দেখে রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা, ভালোবাসার মানুষেরা আমাকে নিয়ে দুঃখ করে, খোচা দেয় কেউ কেউ। বলে – সারাজীবন শুধু অন্যের জন্যই ভোট চাইলেন, ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ালেন।’

আমি বলি, ‘সবকিছু সবার জন্য নয়রে! আমি তো পেয়েছি, নেত্রী আমাকে সরসারি মনোনয়নের চিঠি দিয়েছেন।’ তারা বলে, ‘সেই চিঠি কবরে নিয়ে যান।’ তাদের সাথে সুর মিলিয়ে আমিও বলি – ‘যদি পারো চিঠিটা আমার কফিনে দিয়ে দিও।’

একুশে/এটি