
জিন্নাত আয়ুব, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রাম এলাকায় এস্কেভেটর মেশিন ব্যবহার করে নির্বিচারে পাহাড় কেটে খেলার মাঠ ভরাট ও আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ করছে উপজেলা প্রশাসন। পাহাড় কাটার পাশাপাশি ওই এলাকার শতাধিক আম, পেয়ারা ও কলাগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এছাড়াও উচ্ছেদ করা হয়েছে ৬টি বসতঘর।
এখন পাহাড় কেটে বানানো সমতল জমিতে তৈরি হচ্ছে ১৩০টির বেশি পাকা ঘর। এছাড়া পাহাড় কেটে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আনোয়ারা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটে।
সরেজমিন দেখা গেছে, আনোয়ারা উপজেলা বারখাইন ইউনিয়নের হাজীগাঁও এলাকায় গুচ্ছগ্রামে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বসতঘর নির্মাণের জন্য একটি এস্কেভেটর ব্যবহার করে শ্রমিক দিয়ে নির্বিচারে বিশাল একটি পাহাড় কাটছে উপজেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে পাহাড়ের বড় অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। সেসব মাটি খেলার মাঠ ভরাটের জন্য নেয়া হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই উন্নয়ন কাজের অজুহাতে পাহাড় কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। স্থানীয় বাসিন্দা জাহানারা বেগম বলেন, ‘গুচ্ছগ্রামের এই পাহাড়ের ঢালুতে আমরা ছয় পরিবারের বসতি ছিল। ইউএনও’র নির্দেশে এসব ঘর উচ্ছেদ করে পাহাড় কেটে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং এখানে ঘর বানানো হচ্ছে।’
যদিও বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের (সংশোধন) ২০১০-এর ৬-এর ‘খ’ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো পাহাড় বা টিলা কর্তন বা মোচন করা যাইবে না, তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণক্রমে পাহাড় কর্তন করা যাইবে।’ আইনে পাহাড় বা টিলা কাটার জন্য ছাড়পত্রের বিধান থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে উপজেলা প্রশাসন কোনো অনুমতি নেয়নি বলে জানা যায়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুফিদুল আলম একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘পাহাড় কাটার জন্য আনোয়ারা উপজেলা প্রশাসন কোনো অনুমতি নেয়নি। তাছাড়া পাহাড় কাটার কোনো এখতিয়ার তো উপজেলা প্রশাসনের নেই। কেউ অন্যায়ভাবে কাটলে তারা বরং বাধা দেবে। কাটবে কেন?’

অভিযোগের বিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমদ একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘পাহাড় কাটা বলতে এখানে আমরা শ্রেণী বিন্যাস করে পাহাড় মোচন করে সমতল করছি। এখানের কিছু অবশিষ্ট মাটি দিয়ে আমরা একটি স্কুল মাঠ ভরাট করছি ছাত্র-ছাত্রীদের বিনোদনের জন্য।’
পরিবেশবিদ ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘পরিবেশের সর্বনাশ করে কেন তৈরি করা হবে আশ্রয়ণ ও খেলার মাঠ? পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া শর্ত না মানার কারণে পরিবেশের আজ বারোটা বাজতেছে। পরিবেশ ঠিক না থাকলে উন্নয়ন দিয়ে কী হবে?’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক আল আমিন বলেন, ‘উন্নয়ন দরকার। কিন্তু তার চেয়ে বেশি দরকার পরিবেশের ভারসাম্য। সংরক্ষিত এলাকায় যারা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চান, তারাও বলেন, পরিবেশের সব শর্ত মানবেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় ভিন্ন। পরিবেশ অধিদপ্তরের শর্ত মানতে সবাইকে বাধ্য করতে হবে।’