
প্রতি বছর জানুয়ারির শুরুতে বাংলাদেশ পুলিশ একটি বিশেষ সপ্তাহ উদযাপন করে, যা “পুলিশ সপ্তাহ” নামে পরিচিত। এই সময় পুলিশ তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও অর্জন তুলে ধরে এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে নিজেদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু এই বছর, ২০২৫ সালে, পুলিশ সপ্তাহ আয়োজন নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
সাধারণত, পুলিশ সপ্তাহ জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হয়। তবে, জাতীয় নির্বাচনের কারণে ২০১৮ ও ২০২৪ সালে এটি পিছিয়ে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়। এই বছরও একই কারণে পুলিশ সপ্তাহ পিছিয়ে ফেব্রুয়ারিতে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমানে পুলিশ সপ্তাহ আয়োজন করা হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এখনও পর্যন্ত পুলিশ সপ্তাহ উদযাপনের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ফলে, কোনো ইউনিটকে প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনাও দেওয়া হয়নি। কবে নাগাদ এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তা কেউ বলতে পারছেন না।
পুলিশ সপ্তাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। এই সময় পুলিশ তাদের বিভিন্ন অর্জন ও কর্মকাণ্ড জনগণের সামনে তুলে ধরে। একই সাথে, তারা সরকারের কাছে তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পেশ করে। পুলিশ সদস্যরা পদোন্নতি, ঝুঁকি ভাতা, নিজস্ব বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ এবং গাড়ি কেনার জন্য সুদমুক্ত ঋণসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়ে থাকেন।
তবে, সাম্প্রতিক সময়ে চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন মহলে পুলিশের অতিরিক্ত বল প্রয়োগের সমালোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও, পুলিশ বাহিনীতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে শীর্ষ পদে রদবদল।
এই পরিস্থিতিতে পুলিশ সপ্তাহ আয়োজন করা হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকে। কেউ কেউ বলছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুলিশকে জনমুখী এবং সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে সংস্কার প্রয়োজন। সেই সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে হয়তো নতুন আঙ্গিকে পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠিত হতে পারে। আবার, রমজান মাস এবং অন্যান্য ব্যস্ততার কারণে এই বছর পুলিশ সপ্তাহ আয়োজন করা সম্ভব নাও হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, পুলিশ সপ্তাহ কবে নাগাদ হবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। কারণ, এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত হলে সবাইকে জানানো হবে।
তবে, পুলিশ সপ্তাহে প্রতি বছর সরকারের একটি বড় অঙ্কের অর্থ খরচ হয়। এই পরিস্থিতিতে সরকার যদি অন্য কোনো উপায়ে পুলিশ সদস্যদের উৎসাহ দেওয়ার কথা ভাবে, তবে পুলিশ সপ্তাহ হয়তো নাও হতে পারে।
এ বিষয়ে সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বলেন, পুলিশ সপ্তাহে নিজেদের কাজকর্ম ও পারফরম্যান্স হিসাবনিকাশ করা হয়। আরেকটা হচ্ছে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক। সরকারপ্রধান আসেন, ভাষণ দেন। এই পুলিশ সপ্তাহে সরকারের অনেক টাকা-পয়সাও খরচ হয়। এখন তো কৃচ্ছ্রসাধন করছে সরকার। অতএব নিজেদের কাজকর্মের হিসাব হতেই পারে। কিন্তু সামনে তো রমজান। এই অল্প সময়ে পরিবর্তিত এই পরিস্থিতির মধ্যে পুলিশ সপ্তাহের আয়োজন হয়তো সম্ভব হবে না। পূর্ণাঙ্গ পুলিশ সপ্তাহ না করে এক বা দুইদিনের একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পুলিশের কাজকর্ম ও পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করা এখন সম্ভব, যদি সরকার রাজি হয়।
৫ আগস্ট, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে কি এবার পুলিশ সপ্তাহ হতে দেরি হচ্ছে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি একটা কারণ হতে পারে। তবে, এবার করতেই হবে এমনও নয়। যেহেতু পরিবর্তিত পরিস্থিতি, পরের বছরও করা যেতে পারে। আর স্বীকৃতি তো ভালো কাজের হয়, উৎসাহ দেবার জন্য। যেটি খারাপ, সেটির মূল্যায়নের জন্য পুলিশ সপ্তাহের দরকার পড়ে না। এজন্য বিভাগীয় ব্যবস্থা, ফৌজদারি ব্যবস্থা তো আছে।’
‘আমি মনে করি, বিশেষ পরিস্থিতির কারণে মিনিমাম দুই/একদিনের জন্য এই উদযাপনটা আয়োজনের চেয়ে পরের বছর ভালো করে করাটা যৌক্তিক। কারণ, এই অনুষ্ঠান ঘিরে অনেক ইন্টারেকশন হয়, অনেক সদস্যকে ঢাকায় আসতে হয়। খরচের বিষয় তো আছেই।’
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘সরকার কী চাইছে সেটি গুরুত্বপূর্ণ। সরকার চাইলেই সম্ভব। সরকার চাইছে কি না, সেটি সার্ভিস কর্মকর্তারা বলতে পারবেন। তবে, পুলিশ সপ্তাহের আয়োজন করাই হয় সদস্যদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য, তারাও উজ্জীবিত হন। সেটি করা গেলে ভালো।’