বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

পুরনো ইঞ্জিনে ধুঁকছে রেল, বন্ধ ৭০ ট্রেন

একুশে প্রতিবেদক | প্রকাশিতঃ ৩ মে ২০২৫ | ৭:০৮ পূর্বাহ্ন


ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ) ও কোচের তীব্র সংকট এবং জনবল স্বল্পতার কারণে সারা দেশে বাংলাদেশ রেলওয়ের ৭০টি ট্রেনের চলাচল বন্ধ রয়েছে, যার বেশিরভাগই স্বল্প ও মাঝারি দূরত্বে চলাচল করে সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষের যাতায়াতে ভূমিকা রাখত। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় এসব রুটের যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে চরমে।

রেলওয়ে কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বন্ধ থাকা ট্রেনগুলোর মধ্যে ৩৩টি কমিউটার, ২১টি লোকাল, ১০টি মিশ্র (মিক্সড), চারটি মেইল ও দুটি শাটল ট্রেন রয়েছে।

সংস্থাটির পূর্বাঞ্চলে ৩২টি এবং পশ্চিমাঞ্চলে ৩৮টি ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে চট্টগ্রাম-নাজিরহাট, চট্টগ্রাম-বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ-দেওয়ানগঞ্জ, ময়মনসিংহ-ভৈরববাজার, সিলেট-ছাতকবাজার রুটের লোকাল; আখাউড়া-সিলেট রুটের মেইল; লাকসাম-চাঁদপুর, লাকসাম-নোয়াখালী, ঢাকা-হাই-টেক সিটি ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের কমিউটার ট্রেন রয়েছে।

পশ্চিমাঞ্চলে গোয়ালন্দ-ঈশ্বরদী, পার্বতীপুর-চিলাহাটি রুটের মিশ্র; রাজবাড়ী-গোয়ালন্দঘাট, ঈশ্বরদী-পার্বতীপুর, লালমনিরহাট-পার্বতীপুর, পার্বতীপুর-পঞ্চগড়, লালমনিরহাট-বুড়িমারী, সান্তাহার-লালমনিরহাট রুটের লোকাল; রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটের শাটল; রাজবাড়ী-ভাঙ্গা, ঢাকা-ভাঙ্গা, পার্বতীপুর-লালমনিরহাট, পার্বতীপুর-পঞ্চগড়, লালমনিরহাট-পার্বতীপুর, রংপুর-লালমনিরহাট, কাউনিয়া-রমনাবাজার রুটের কমিউটার এবং সান্তাহার-পঞ্চগড় রুটের মেইল ট্রেন বন্ধ আছে।

বন্ধ হওয়া সান্তাহার-পঞ্চগড় রুটের ‘উত্তরবঙ্গ মেইল’ ট্রেনটি ২০২০ সালে করোনা মহামারীর সময় বন্ধ হওয়ার পর আর চালু হয়নি। স্থানীয়রা জানান, এটি ওই অঞ্চলের নিম্ন আয় ও শ্রমজীবী মানুষের জন্য সুলভ যাতায়াতের প্রধান বাহন ছিল। ট্রেনটি বন্ধ হওয়ায় তাদের যাতায়াত খরচ ও ভোগান্তি দুটোই বেড়েছে।

ট্রেন বন্ধের কারণ হিসেবে ইঞ্জিন-কোচ সংকট ও জনবল স্বল্পতার কথা রেলের ৫৪ নম্বর টাইমটেবিল বইয়েও উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ইঞ্জিন-কোচ প্রাপ্তি সাপেক্ষে এগুলো আবার চালানো হবে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলের জেনারেল ম্যানেজার আবদুল আওয়াল ভূঁইয়া বলেন, “ট্রেন বন্ধ থাকার প্রধান কারণ ইঞ্জিন ও চালকের সংকট। সেই সঙ্গে জনবলেরও সংকট রয়েছে। তবে বন্ধ হওয়া ট্রেনগুলোর পাশাপাশি কিছু নতুন ট্রেনও চালু করা হয়েছে।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, রেলওয়ের কৌশলগত পরিকল্পনার অভাব রয়েছে এবং অর্ধেকের বেশি ইঞ্জিনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল পেরিয়ে যাওয়ায় বন্ধ ট্রেন পুনরায় চালু করার সক্ষমতা কমে গেছে।

রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেন জানিয়েছেন, সংকট কাটাতে ইঞ্জিন সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে মিটার গেজ ও ব্রড গেজ মিলিয়ে প্রায় ৯০টি ইঞ্জিনের প্রয়োজন। তিনি বলেন, “নতুন ইঞ্জিন কেনার জন্য পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে এডিবির অর্থায়নে মিটার গেজের জন্য ৩০টি ইঞ্জিন কেনার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।”

তবে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলছেন, রেলের উন্নতি সময়সাপেক্ষ বিষয়। তিনি বলেন, “কক্সবাজারগামী যাত্রীদের চাহিদা পূরণের জন্য দুটো ট্যুরিস্ট ট্রেন চালু করা হয়েছে। জয়দেবপুর ও নরসিংদী থেকে কমিউটার সার্ভিস চালু হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা রুটের কমিউটার ট্রেনের মানোন্নয়ন করা হয়েছে। সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে। নতুন কোচ, নতুন লোকোমোটিভ এলে আরো ট্রেন বাড়ানো হবে।”