মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বন বিভাগের বিরুদ্ধেই বন পোড়ানোর অভিযোগ মহেশখালীতে

পুড়ল পানের বরজ-প্রাণীর আবাস

ফুয়াদ মোহাম্মদ সবুজ | প্রকাশিতঃ ১৯ মে ২০২৫ | ৭:১৭ অপরাহ্ন


মহেশখালী (কক্সবাজার) : কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর বনবিট এলাকায় ‘সামাজিক বনায়ন’ প্রকল্পের নামে পাহাড়ে আগুন লাগিয়ে কৃষকদের পানের বরজ, বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা এবং অসংখ্য প্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বন বিভাগের কর্মী ও প্রকল্পের শ্রমিকরাই গত ১৭ মে জেমঘাট এলাকার পশ্চিমের পাহাড়ে এই আগুন লাগানোর ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত।

আগুনে প্রাকৃতিক বনের অংশবিশেষ, কয়েকশো ছোট-বড় গাছ, মূল্যবান ভেষজ উদ্ভিদ এবং বহু পশুপাখির আশ্রয়স্থল পুড়ে গেছে। এতে চাষযোগ্য জমির পাশাপাশি পরিবেশেরও অপরিমেয় ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা। ধারণা করা হচ্ছে, আগুনে পুড়ে অনেক পশুপাখি মারা গেছে। বিশেষ করে পানের বরজ পুড়ে যাওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বন বিভাগের তথাকথিত ‘সামাজিক বনায়ন’ প্রকল্পের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরেই বন ধ্বংসের এই পাঁয়তারা চলছে। গরিব জনগণকে সুফলভোগী দেখিয়ে বন সংরক্ষণের নামে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও বাস্তবে বন উজাড় ও পাহাড়ে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। তাদের দাবি, শাপলাপুর বিট কার্যালয়ের কর্মীদের উপস্থিতিতেই ৮-১০ জন শ্রমিক জেমঘাট পাহাড়ে আগুন দেয়, যার উদ্দেশ্য ছিল পুরোনো গাছপালা পুড়িয়ে নতুন করে ‘সামাজিক বনায়ন’ করা।

এলাকাবাসীর আরও অভিযোগ, বন সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকা কিছু অসাধু কর্মকর্তা ‘পাহাড় ও গাছখেকোদের’ সঙ্গে আঁতাত করে পাহাড় কাটা ও বন উজাড়ে সহায়তা করছেন। প্রতিদিন রাতে পাহাড় কেটে মাটি ও গাছ পাচার হলেও বন বিভাগ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে তারা জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাপলাপুর বিট কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, “সামাজিক বনায়নের কাজে নিযুক্ত সুফলভোগীরা নিজেরাই আগুন দিয়েছে বলে শুনেছি। মামলার সাক্ষ্য দেওয়ার কাজে ব্যস্ত থাকায় সে সময় ঘটনাস্থলে যেতে পারিনি।” তিনি ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেও তদন্ত বা দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনও আশ্বাস দেননি।

তবে সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) সাজমিনুল ইসলাম বলেন, “বনে আগুন দেওয়ার বিষয়টি শুনেছি। ইতোমধ্যে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের সভাপতি ও সেক্রেটারিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে।” তিনি ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। যদিও স্থানীয়দের আশঙ্কা, তদন্তের নামে প্রকৃত দোষীদের আড়াল করার চেষ্টা হতে পারে।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হেদায়েত উল্লাহ জানিয়েছেন, বন বিভাগের কর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারি প্রকল্পে আগুন দেওয়ার অভিযোগটি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে এবং বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) বেলায়েত হোসেন স্বীকার করেছেন, “বনে আগুন লাগানোর কোনও আইনি বৈধতা নেই। তবুও বন পরিষ্কারের জন্য আগুন দেওয়ার এই পুরোনো পদ্ধতি দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে।” তবে তিনি জানান, পরিবেশ রক্ষায় ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড রোধে কঠোর নজরদারি চালানো হবে।