মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সাঙ্গু নদীতে নৌপুলিশের এসআইয়ের ‘জাল বাণিজ্য’, দিশেহারা গরিব জেলেরা

‘বিষয়টি আসলে মৎস্য অফিসের লোকজন বড় করে ফেলেছে। আমাদের বললে তো হতো, ওইদিকে যেতাম না আমরা… আমরা তো..! ভাগেযোগে চলতাম।’- চাঁদাবাজির অভিযোগে নৌপুলিশ এসআইয়ের ‘স্বীকারোক্তি’

আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি | প্রকাশিতঃ ১৯ মে ২০২৫ | ৮:৩৯ অপরাহ্ন


চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বার আউলিয়া ঘাট নৌপুলিশ ফাঁড়ির এক উপ-পরিদর্শকের (এসআই) বিরুদ্ধে উঠেছে চাঁদাবাজি ও হয়রানির গুরুতর অভিযোগ। অভিযুক্ত এসআই রুবেল মজুমদার জেলেদের মাছ ধরার জাল কেড়ে নিয়ে সেই জাল আবার তাদের কাছেই টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেন এবং মাসিক ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় উপকূলীয় জেলে সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।

গতকাল (রবিবার, ১৮ মে) আনোয়ারা উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের গ্রহ নাথ জলদাশ এবং বরুমচড়া ইউনিয়নের প্রভাব জলদাশ নামে দুই জেলে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তারের কাছে এই বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগে ভুক্তভোগী জেলেরা উল্লেখ করেন, “নৌ পুলিশ আমাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে এবং নানা অজুহাতে চাঁদা দাবি করে আসছে। তারা আমাদের মাছ ধরার জাল সাঙ্গু নদী থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে সেই জাল আমাদের কাছেই টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে। এমনকি, বিনা কারণে আমাদের ৪ জেলেকে ধরে নিয়ে দুইদিন হাজতবাস করানো হয়েছে।” জেলেরা আরও জানান, জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর এসআই রুবেল মজুমদার ০১৮৫৫-৯৬৬৭৩৩ নম্বর থেকে ফোন করে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবি করছেন। ফোনে তিনি নিজেকে ‘দোভাষীর হাট নৌপুলিশের এসআই রুবেল’ হিসেবে পরিচয় দেন।

দুঃখ প্রকাশ করে অভিযোগকারীরা বলেন, “বিগত ১০০ বছর ধরে আমাদের পূর্বপুরুষেরা এই সাঙ্গু নদী থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কোনোদিন নৌ পুলিশ বা কোস্টগার্ডের এমন উপদ্রব দেখিনি। একটি জালে ৫০০ গ্রামের মতো ছোট চিংড়ি ধরা পড়ে, যা দিয়েই আমাদের সংসার চলে। জাল বসানোই আমাদের একমাত্র আয়ের পথ, যা এখন হুমকির মুখে।”

এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত এসআই রুবেল মজুমদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এক প্রকার স্বীকার করে নেন। তিনি বলেন, “বিষয়টি আসলে মৎস্য অফিসের লোকজন বড় করে ফেলেছে। আমাদের বললে তো হতো, ওইদিকে যেতাম না আমরা… আমরা তো..! ভাগেযোগে চলতাম।” পরবর্তীতে তিনি বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ না করার জন্যও অনুরোধ জানান।

এ প্রসঙ্গে আনোয়ারা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রাশেদুল হক বলেন, “বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। পুলিশ অভিযান পরিচালনা করতে পারে, কিন্তু জাল পুড়িয়ে ফেলা বা এভাবে হয়রানি করার এখতিয়ার তাদের নেই। এসব করতে গেলে অবশ্যই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অথবা মৎস্য কর্মকর্তার অনুমতি প্রয়োজন।”

এই বিষয়ে মন্তব্য জানতে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তারকে একাধিকবার ফোন ও ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তাঁর পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে, নৌপুলিশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার আ.ফ.ম নিজাম উদ্দিন জানিয়েছেন, “বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব এবং অভিযোগের বিষয়ে প্রমাণ পেলে অবশ্যই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”