
দেশে গত এক বছরে প্রায় ১৩ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি এবং চলতি বোরো মৌসুমে ভালো ফলন হলেও বাজারে চালের দাম না কমে উল্টো বাড়ছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত এক মাসে মোটা চালের দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে সর্বনিম্ন ৫৫ টাকায় এবং মাঝারি ও সরু চালের দামও ৩ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
চালের এই মূল্যবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষেরা। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের বাসিন্দা আয়েশা বেগম জানান, ঈদের আগে মিনিকেট চালের যে ২৫ কেজির বস্তা তিনি ২,১৫০ টাকায় কিনেছিলেন, কয়েক দিন আগে সেই একই বস্তা তাকে ২,৩০০ টাকায় কিনতে হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চালের দাম বাড়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান কারণ হলো, শুল্কছাড়ের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এবং নতুন করে অনুমতি না দেওয়ায় গত এপ্রিল মাস থেকে চাল আমদানি প্রায় বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে চাল আমদানিতে মোট শুল্ক-কর প্রায় সাড়ে ৬৭ শতাংশ।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়াউর রহমান বলেন, “১৫ এপ্রিলের পর চাল আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আমদানি করলে ভারতীয় চালই দেশে আনতে কেজিপ্রতি খরচ পড়বে ৫৩-৫৪ টাকা।”
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে আমদানিকৃত চালের দাম বেশি হওয়ায় দেশীয় বড় ব্যবসায়ীরা এক ধরনের সুরক্ষা পাচ্ছেন। তারা কোনো প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছেন না এবং বিপুল পরিমাণে ধান-চাল মজুত করার সুযোগ পাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের একটি সংস্থার একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করতে হলে শুল্ক-কর তুলে নিয়ে চাল আমদানি অবাধ করে দিতে হবে। সরকার তিন মাসের জন্য আমদানি উন্মুক্ত করে পরিস্থিতি দেখতে পারে।”
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৩ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে এবং বর্তমানে সরকারের গুদামে ১৫ লাখ টনের বেশি চালসহ প্রায় ১৮ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে, যা সন্তোষজনক বলে মনে করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, “সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে শুধু মুদ্রানীতির ওপর জোর দিয়েছে, কিন্তু বাজার ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিচ্ছে না। চাল উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, তাই সঠিক সময়ে আমদানি নিশ্চিত করতে না পারলে বাজার অস্থিতিশীল হবেই।”