
দেশে ডলারের সরবরাহ বাড়ায় টাকার মান শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ তৈরি হলেও তাতে বাধা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের দরপতন ঠেকাতে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেই বাজার থেকে প্রায় ৯৫ কোটি ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এই নীতিকে কেন্দ্র করে অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এক পক্ষ বলছে, এই হস্তক্ষেপের কারণে প্রবাসীরা রেমিট্যান্সের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং আমদানির খরচ না কমায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও কিছু ব্যাংকার বলছেন, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স খাতকে সুরক্ষা দিতে এবং হুন্ডির বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে এই স্থিতিশীলতা জরুরি।
গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অর্থ পাচার কমে আসা এবং প্রবাসী আয় ও রপ্তানি বৃদ্ধিতে দেশে ডলার সংকট কেটে গিয়ে উল্টো জোগান বেড়ে যায়। ফলে ডলারের দর ১২৩ টাকা থেকে কমে ১২০ টাকার কাছাকাছি নামে। এ অবস্থায় দরপতন ঠেকাতে গত ১৩ জুলাই থেকে ডলার কেনা শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। অথচ এর আগের তিন বছর ধরে টাকার পতন ঠেকাতে প্রায় ২৬ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল সংস্থাটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “বাজারে চাহিদার চেয়ে ডলারের জোগান বেশি হওয়ায় আমরা স্থিতিশীলতা রাখতে ডলার কিনছি। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সমৃদ্ধ হচ্ছে। এখনই ডলারের দর কমে গেলে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং হুন্ডি বাজারের দৌরাত্ম্য বেড়ে যেতে পারে।”
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ না করলে ডলারের দর এরই মধ্যে ১১৫ টাকায় নেমে আসত। তাদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নীতির কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো শ্রমবাজারগুলোতে এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো প্রবাসীদের কাছ থেকে ১১৯ টাকা দরে ডলার কিনে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর কাছে ১২১ টাকায় বিক্রি করে অন্যায্য মুনাফা করছে।
ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান টিকে গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ মুস্তাফা হায়দার বলেন, “টাকা শক্তিশালী হলে আমদানিনির্ভর দেশ হিসেবে বাংলাদেশের মানুষ উপকৃত হবে এবং ভোগ্যপণ্যের দাম কমবে। তবে দেখতে হবে ডলারের সরবরাহ যেন কমে না যায়।”
তবে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান একটি স্থিতিশীল নীতির পক্ষে। তিনি বলেন, “এখন খেলার সময় নয়, বরং বাজার স্থিতিশীল রাখা বেশি দরকার। কার্ব মার্কেটে ডলারের দর এখনও ১২৪ টাকার বেশি। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার কেনার নীতি আপাতত অব্যাহত রাখাই ভালো।”