
খেলাপি ঋণের হারে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে আসার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে দেখা গেছে, পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ এক বছরের ব্যবধানে ১২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৮ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
এডিবির প্রতিবেদনটি ২০২৩ সালের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি, যেখানে ৯.৬ শতাংশ খেলাপি ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে ছিল। সে সময় ভারতের খেলাপি ঋণের হার ছিল মাত্র ১.৭ শতাংশ। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ২৭.০৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, “আগে বিভিন্ন সময় ছলচাতুরী করে খেলাপি ঋণ কম দেখানো হতো। এখন ঋণমানের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করা শুরু হয়েছে। আবার গত বছরের আগস্টে ক্ষমতা পরিবর্তনের পর পূর্ববর্তী সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও নেতাদের ঋণও খেলাপি হয়ে যাওয়ায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বিগত সরকারের সময় ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে বের করে নেওয়া অর্থ এখন খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে শুরু করেছে। বিশেষ করে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ব্যাপক হারে বেড়েছে। এই ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ড. মুজেরী আরও বলেন, “খেলাপি ঋণ এভাবে বাড়তে থাকলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই যাঁরা ভালো ব্যবসায়ী, তাঁরা যেন আবার ব্যবসা শুরু করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।”
এদিকে, খেলাপি ঋণের লাগাম টানতে নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জানা গেছে, খেলাপি হয়ে পড়া প্রায় ১,৪০০টি প্রতিষ্ঠান ঋণ পুনর্গঠনের জন্য আবেদন করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মাত্র ১ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দিয়ে একটি নতুন নীতিমালা তৈরি করতে যাচ্ছে, যা খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমাতে সহায়ক হবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা।