বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

বদলে যাওয়া জামায়াত? বাংলাদেশকে নিয়ে দিল্লির নীতি নির্ধারকদের দ্বিধা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিতঃ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২:১৮ অপরাহ্ন


বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জামায়াতে ইসলামীর শক্তিবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে দলটিকে নিয়ে নিজেদের পুরোনো দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্বিবেচনা করা উচিত কিনা, তা নিয়ে ভারতের নীতি নির্ধারক ও বিশ্লেষক মহলে চলছে দ্বিধা ও বিতর্ক।

দলটি কি আদৌ বদলেছে, নাকি এটি তাদের নতুন কৌশল—এই প্রশ্নে দেশটির পর্যবেক্ষকরা এখন দ্বিধাবিভক্ত। সম্প্রতি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জামায়াত সমর্থিতদের বিজয় এবং তাদের নেতাদের নতুন ধরনের বক্তব্য এই আলোচনাকে আরও উস্কে দিয়েছে।

‘জামায়াত ২.০’ ধারণা ও নতুনত্বের বয়ান

ওপি জিন্দাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও বাংলাদেশ গবেষক শ্রীরাধা দত্ত, যিনি সম্প্রতি ঢাকা সফর করেছেন, তিনি জামায়াতের মধ্যে একটি পরিবর্তনের চিত্র তুলে ধরেছেন। তার মতে, দলটি এখন যেন ‘জামায়াত ২.০’-এর রূপে আবির্ভূত হয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের সঙ্গে বৈঠকের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে শ্রীরাধা দত্ত বলেন, তিনি ড. তাহেরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, সরকার গঠন করলে তারা শরিয়া আইন আনবেন কিনা।

ড. তাহের উত্তরে বলেন, “এটা আবার কোথায় শুনলেন? আমরা কবে কোথায় বলেছি জিতলে আমরা বাংলাদেশে শরিয়া আইন আনব!”

১৯৭১ সালে জামায়াতের ভূমিকা প্রসঙ্গে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, মতিউর রহমান নিজামী বা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মতো নেতারা একাত্তরের ভূমিকার জন্য প্রকাশ্যেই ক্ষমা চেয়েছেন।

শ্রীরাধা দত্ত আরও জানান, জামায়াতের নতুন নেতৃত্ব ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তেও আগ্রহী। ড. তাহেরের ভাষ্যমতে, ভারত যে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী, তা স্বীকার করতে তাদের কোনো দ্বিধা নেই এবং ২০০১-০৬ সালের মধ্যেকার কোনো ভারত-বিরোধী ঘটনায় জামায়াতের সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ নেই।

তবে শ্রীরাধা দত্তের পর্যবেক্ষণ হলো, জামায়াতের এই অবস্থান একটি ‘চার্ম অফেনসিভ’ বা মুগ্ধ করার প্রচেষ্টা হতে পারে এবং তাদের কথায় বিশ্বাস না করে বাস্তবে তারা কী করছে, তা দেখেই ভারতকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

‘চিতাবাঘ ডোরা বদলায় না’

অন্যদিকে, ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা মনে করেন, জামায়াতে ইসলামী তাদের মৌলিক চরিত্র কখনোই বদলাতে পারে না।

তিনি বলেন, “তাদের হাতে আসলে রক্ত লেগে আছে – এটা আমাদের বুঝতে হবে! জামায়াত হলো আসলে মুসলিম ব্রাদারহুডের অংশ। চিতাবাঘ যেমন তার গায়ের ডোরা বদলায় না, জামায়াতও আসলে কখনোই পালটাবে না!”

হর্ষবর্ধন শ্রিংলার মতে, জামায়াতের অতীতের কর্মকাণ্ডের কারণে ভারত কখনোই তাদের পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারে না। তিনি বলেন, “এখানে আমাদের আসলে একটা সীমারেখা টানতেই হবে। তারা মুখে কী বলছে সেটা শোনা একটা জিনিস, আর বাস্তবে কী করছে সেটাও দেখা দরকার।”

এই দ্বন্দ্ব মতামত এটাই স্পষ্ট করে যে, বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভারতের সামনে একটি জটিল কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।