বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

রোহিঙ্গা সংকট: ৭ দফা প্রস্তাব ইউনূসের, মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়ানোর আহ্বান

জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে উদ্বেগ, যুক্তরাষ্ট্রের ৬০ মিলিয়ন ডলার সহায়তার ঘোষণা
একুশে প্রতিবেদক | প্রকাশিতঃ ১ অক্টোবর ২০২৫ | ৩:২১ অপরাহ্ন

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ
রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে সাত দফা কর্মপরিকল্পনা প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে প্রত্যাবাসনের জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে এবং মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

জাতিসংঘে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের দুর্দশা নিয়ে আয়োজিত এক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “রোহিঙ্গা সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে, এর সমাধানও সেখানেই নিহিত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই মিয়ানমার এবং আরাকান আর্মির ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ করতে হবে, যাতে তারা রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন দ্রুত বন্ধ করে এবং তাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু করে।”

এই সম্মেলনে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রধানরা তহবিলের তীব্র সংকট এবং রাখাইনের ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেন, রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ, মানবিক সহায়তার সুযোগ এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান জানানোসহ পাঁচটি বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।

শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “বাংলাদেশে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম দীর্ঘস্থায়ীভাবে স্বল্প অর্থায়নে ভুগছে। আগামী বছরের জন্য তহবিলের সম্ভাবনা আরও ভয়াবহ। অর্থ না এলে শিশুদের অপুষ্টিতে মৃত্যু বা আরও বেশি রোহিঙ্গার ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রযাত্রার মতো ঘটনা দেখতে হতে পারে।”

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (WFP) কান্ট্রি ডিরেক্টর ডম স্কালপেলি জানান, আগামী ছয় মাসের মধ্যে অন্তত ৬০ মিলিয়ন ডলার না পেলে ডিসেম্বর থেকে খাদ্য সহায়তায় বড় ধরনের সংকট তৈরি হবে।

মিয়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ দূত জুলি বিশপ বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পথে একটি ‘অতিক্রমযোগ্য বাধা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ৭ দফা প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে—রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য রোডম্যাপ তৈরি, মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির ওপর সহিংসতা বন্ধে চাপ প্রয়োগ, রাখাইনে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ এবং রোহিঙ্গাদের আস্থার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ, এবং জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের (JRP) জন্য পূর্ণ অর্থায়ন নিশ্চিত করা।

এদিকে, সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত চার্লস হার্ডার রোহিঙ্গাদের জন্য ৬০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি সহায়তার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তিনি শরণার্থীদের জন্য বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির মতো নীতি পরিবর্তনেরও আহ্বান জানান।