বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

২১৫ কোটির আইকনিক রেলস্টেশন: পরিচালন ব্যয়ের ভয়ে অলস পড়ে আছে স্বপ্ন

একুশে প্রতিবেদক | প্রকাশিতঃ ২ অক্টোবর ২০২৫ | ২:৪৮ অপরাহ্ন


কক্সবাজারে ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঝিনুক আকৃতির আইকনিক রেলস্টেশনটি উদ্বোধনের প্রায় দুই বছর হতে চললেও এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা পুরোপুরি তালাবদ্ধ হয়ে আছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও ছয়তলা এই আধুনিক ভবনের হোটেল, ফুড কোর্ট, শোরুমসহ শত শত বাণিজ্যিক স্পেস আজও চালু হয়নি। ফলে যাত্রীরা বিশ্বমানের এই স্টেশনের কোনো সুবিধাই পাচ্ছেন না, আর বিশাল এই অবকাঠামো প্রায় অলস পড়ে থেকে দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ানোর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, স্টেশনটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে শুধু পরিষেবা খাতেই (বিদ্যুৎ, পানি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ) প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা খরচ হবে। এই বিপুল ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয় বলেই এখন পর্যন্ত স্টেশনটি চালু করা যাচ্ছে না।

এই অচলাবস্থা কাটাতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ স্টেশনটি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে এটি পরিচালনার জন্য একটি খসড়া প্রস্তাব রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এবং দরপত্র আহ্বানের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করা হচ্ছে। তবে কবে নাগাদ দরপত্র আহ্বান করা হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে এ ধরনের বহুমাত্রিক সুবিধাসম্পন্ন রেলস্টেশন পরিচালনার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকায় আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমেই ইজারাদার খোঁজা হতে পারে, যা পুরো প্রক্রিয়াকে আরও সময়সাপেক্ষ করে তুলতে পারে।

বর্তমানে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে দুটি ট্রেন চলাচল করে। যাত্রীদের অভিজ্ঞতা হলো, ট্রেন আসা এবং ছাড়ার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শুধু স্টেশনের নিচতলা খোলা হয়। ট্রেন চলে গেলে আবারও পুরো স্টেশন এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে ভবনের প্রথম থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত থাকা কয়েক ডজন দোকান, শোরুম, ৩৯ কক্ষের হোটেল, রেস্টুরেন্ট, মাল্টিপারপাস হল এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক স্থান অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, “দুই বছর কেটে গেলেও কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন চালু করতে না পারা একটি বিরাট আর্থিক ক্ষতি। বিশাল বিনিয়োগের বিপরীতে যদি কোনো আয় না আসে, তবে এটি দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।”

তিনি আরও বলেন, “রেলওয়ে প্রায়ই বিলাসী ও আধুনিক অবকাঠামোর পেছনে ছোটে, কিন্তু প্রকৃত প্রয়োজন ও টেকসই পরিচালন পরিকল্পনার বিষয়টি উপেক্ষিত থাকে। এই আইকনিক স্টেশন তার একটি চমৎকার উদাহরণ। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থাপনার আওতায় না আনলে এই বিশাল বিনিয়োগ কেবলই ফাঁকা বিলাসিতা হিসেবে থেকে যাবে।”

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন জানিয়েছেন, “কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন প্রাইভেট অপারেটরকে দিয়েই পরিচালনা করা হবে। দরপত্র আহ্বানের কাজ শুরু হয়েছে এবং আশা করি, খুব শিগগির এটি চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।”