বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

বিপরীতমুখী অবস্থানে বিএনপি-জামায়াত-এনসিপি, সমাধানের পথ খুঁজছে সরকার

জুলাই সনদ, গণভোট, প্রশাসন নিয়ে ত্রিমুখী চাপে ইউনূস সরকার
একুশে প্রতিবেদক | প্রকাশিতঃ ২৩ অক্টোবর ২০২৫ | ২:৩৭ অপরাহ্ন


জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি, গণভোটের সময় এবং প্রশাসনে রদবদলসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ইস্যুতে দেশের প্রধান তিনটি রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বিপরীতমুখী অবস্থানে চাপে পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

দল তিনটি সম্প্রতি পৃথক পৃথকভাবে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে নিজ নিজ দাবি তুলে ধরেছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে কীভাবে এই বিপরীতমুখী অবস্থানগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে, তা নিয়েই এখন মূল চ্যালেঞ্জে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার।

মতপার্থক্যের প্রধান বিষয়গুলো

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ: বিএনপি চায় প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়ন হোক। অন্যদিকে জামায়াত ও এনসিপি উভয়েই চায় একটি ‘সাংবিধানিক আদেশ’ জারি করুক অন্তর্বর্তী সরকার। এনসিপি আরও এক ধাপ এগিয়ে বলছে, এই আদেশ জারি করতে হবে গণঅভ্যুত্থানে গঠিত সরকারকে, আওয়ামী লীগ মনোনীত রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে নয়।

গণভোটের সময়: বিএনপি চায় জাতীয় নির্বাচনের দিন একইসঙ্গে গণভোট হোক। জামায়াত ও এনসিপি উভয়েই চায় নির্বাচনের আগে, নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট সম্পন্ন হোক। জামায়াত নেতা ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের অভিযোগ করেছেন, বিএনপি গণভোট নিয়ে ‘জটিলতা তৈরির চেষ্টা’ করছে।

সরকারের ভূমিকা: বিএনপি চায় অন্তর্বর্তী সরকার পুরোপুরি ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের’ আদলে কাজ করুক। জামায়াত আদালতের রায়ের অপেক্ষায় থাকলেও রায় পক্ষে এলে একই ভূমিকা প্রত্যাশা করে। এনসিপি ‘তত্ত্বাবধায়ক’ শব্দটির ব্যবহারে আপত্তি জানিয়ে বলেছে, এর পেছনে ‘দুরভিসন্ধি’ থাকতে পারে।

প্রশাসনে রদবদল: তিনটি দলই প্রশাসন, পুলিশ ও বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং দলীয় আনুগত্যের ঊর্ধ্বে উঠে রদবদলের দাবি জানিয়েছে। জামায়াত ও বিএনপি অভিযোগ করেছে, প্রশাসনের একটি বড় অংশ এখনও একটি বিশেষ দলের (বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে) অনুগত। এনসিপি উপদেষ্টা পরিষদে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকা ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করে তাদের অপসারণের দাবি জানিয়েছে।

নির্বাচন কমিশন: এনসিপি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এর পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছে। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ‘শাপলা’ প্রতীক না পেলে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ারও হুমকি দিয়েছেন।

সরকারের অবস্থান ও আশ্বাস

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, অধ্যাপক ইউনূস সব দলের বক্তব্য শুনেছেন এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজনে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি দলগুলোর সহযোগিতা চেয়েছেন এবং আশ্বস্ত করেছেন যে, নির্বাচনের আগে প্রশাসনে যেকোনো রদবদল তিনি নিজেই তদারকি করবেন।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও তা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না এবং নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে সরকার বদ্ধপরিকর।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ পাওয়ার পর উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধি দলে ছিলেন নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাছুম ও রফিকুল ইসলাম খান। এনসিপির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সরকারের পক্ষে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আসিফ নজরুল এবং আদিলুর রহমান খান।