
অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল স্বামী আর ছয় বছরের শিশু সন্তানকে নিয়ে পাহাড়ের সবুজ দেখবেন। সেই আনন্দযাত্রার উত্তেজনাই ছিল ফজিলাতুন্নেছার (২৮) মনে। এই স্বপ্ন পূরণের জন্যই ঝিনাইদহ থেকে ছুটে এসেছিলেন তারা। গন্তব্য ছিল বান্দরবান।
খুলনা থেকে প্রথমে চট্টগ্রাম। রোববার রাতে এক বন্ধুর বাসায় রাত কাটিয়ে সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালেই বান্দরবানের উদ্দেশে মোটরসাইকেলে চেপে বসেন আলিমুজ্জামান, স্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা আর তাদের সন্তান।
আলিমুজ্জামান জানতেন না, এই আনন্দযাত্রা তার জীবনের সবচেয়ে বড় বিষাদে পরিণত হতে যাচ্ছে। তিনি জানতেন না, তার ভালোবাসার মানুষটির শেষ গন্তব্য বান্দরবানের পাহাড় নয়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কালো পিচ।
সকাল ৯টা। মোটরসাইকেলটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া বাদামতল এলাকায় পৌঁছায়। হঠাৎ একটি লেগুনার সাথে সামান্য ধাক্কা লাগে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মোটরসাইকেল থেকে তিনজনেই রাস্তায় ছিটকে পড়েন।
আলিমুজ্জামান তখনো জানেন না, ঠিক কী ঘটতে চলেছে। তিনি সন্তানকে নিয়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করার আগেই দেখলেন সেই ভয়াল দৃশ্য। বিপরীত দিক থেকে দ্রুতগতিতে ছুটে আসা একটি বাস তার স্ত্রীকে চাপা দিয়ে চলে গেল।
এক মুহূর্ত। মাত্র এক মুহূর্তেই সব শেষ।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে আলিমুজ্জামান উপস্থিত পথচারীদের বলছিলেন, “বাসের চাকা ওর (স্ত্রীর) মাথার হেলমেটটা ভেঙে চুরমার করে ফেলল। মাথাটা থেঁতলে গেল।”
ঘটনাস্থলেই ফজিলাতুন্নেছার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। যে মানুষটির সাথে পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখবেন বলে ঘর ছেড়েছিলেন, সেই মানুষটিই নিথর দেহে পড়ে আছে রাস্তার ওপর। এক দুর্ঘটনা আলিমুজ্জামানের জীবন থেকে সব আনন্দ কেড়ে নিল।
স্থানীয় পথচারী সাইফুল জানান, দুর্ঘটনায় স্বামী আলিমুজ্জামান ও শিশু সন্তানটিও সামান্য আঘাত পেয়েছে। কিন্তু তারা শারীরিক আঘাতের চেয়ে স্ত্রীর মৃত্যুর শোকে কাতর ও বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন।
পটিয়া হাইওয়ে পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. জসিম উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে। তবে ঘাতক বাসটি পালিয়ে যাওয়ায় সেটিকে শনাক্ত করে চালককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
যে ভ্রমণটি হওয়ার কথা ছিল আনন্দ আর সুন্দর স্মৃতির, সেই ভ্রমণই আলিমুজ্জামানের জীবনে বয়ে আনল এক অন্তহীন বিষাদ। পাহাড়ের চূড়ায় ওঠা হলো না, তার আগেই এক নিমেষে সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল মহাসড়কে।