শুক্রবার, ৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২

গৃহস্থালির বর্জ্য: বাড়তি ফি নিলে ‘ফেসবুকে ভিউ না বাড়িয়ে’ সরাসরি অভিযোগ চান শাহাদাত

একুশে প্রতিবেদক | প্রকাশিতঃ ৬ নভেম্বর ২০২৫ | ১০:১৬ অপরাহ্ন


গৃহস্থালির বর্জ্য সংগ্রহে নির্ধারিত ফির চেয়ে বেশি টাকা নেওয়া হলে তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোরগোল না করে সরাসরি সিটি করপোরেশনে অভিযোগ জানানোর অনুরোধ করেছেন মেয়র শাহাদাত হোসেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, অভিযোগ পেলেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এই কথা বলেন। অনুষ্ঠানে মেয়র শাহাদাত হোসেন আগামী এক বছরের কাজের পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, বাসাবাড়ি ও দোকানপাট থেকে সরাসরি বর্জ্য সংগ্রহে ডোর টু ডোর কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এ জন্য বাসাবাড়ি থেকে ফি নিতে পারবে সর্বোচ্চ ৭০ টাকা।

তিনি বলেন, “নিয়োগ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর কেউ কেউ হয়তো বেশি নিচ্ছে। এ বিষয়ে ফেসবুকে দিলে হয়তো ভিউ পাওয়া যাবে, তবে কাজের কাজ হবে না। সিটি করপোরেশনকে সরাসরি অভিযোগ দিলে যারা বেশি নিচ্ছে তাদের বাদ দেওয়া হবে।”

মেয়র শাহাদাত হোসেন আশা প্রকাশ করেন, নগরে সৃষ্ট সব বর্জ্য সংগ্রহ করতে পারলে চট্টগ্রামে আর জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকবে না। তিনি জানান, প্রতিদিন নগরে ৩ হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হলেও সিটি করপোরেশন ২ হাজার ২০০ টন সংগ্রহ করতে পারে, বাকি বর্জ্য ডাস্টবিনের বাইরে ফেলা হয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আবর্জনা থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদনের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে এবং এটি সফল হলে নগরবাসীকে হয়তো বর্জ্য সংগ্রহের টাকা আর দিতে হবে না।

দায়িত্ব গ্রহণের পর নগরের জলাবদ্ধতা সমস্যা ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কমিয়ে এনেছেন দাবি করে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, “এখন নগরের মানুষকে পানির মধ্যে বাস করতে হচ্ছে না। আগের মেয়রের ঘরেও পানি ঢুকে যেত… বহদ্দারহাট, মুরাদপুরে পানি জমে থাকত। এবার টানা ৫ মাস ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। তবু জলাবদ্ধতার সমস্যা হচ্ছে না।”

আগামী এক বছরের পরিকল্পনার বিষয়ে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, বর্ষা দীর্ঘায়িত হওয়ায় রাস্তা উপহার দিতে না পারলেও আগামী এক বছরের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০টি বড় সড়ক উপহার দেবেন। এছাড়া ডিসেম্বরে ‘আমাদের চট্টগ্রাম’ নামের একটি অ্যাপ চালু করা হবে।

গৃহকর বিষয়ে মেয়র শাহাদাত হোসেন জানান, দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের কর সহনীয় পর্যায়ে রাখা হলেও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে আদায়ে শক্ত অবস্থানে আছেন। তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে গৃহকর আদায়ে ছাড় দিচ্ছি না। ২০০ কোটি টাকার মতো গৃহকর যাতে আদায় করতে পারি সে চেষ্টা করছি। বন্দরের গাড়ির কারণে নগরের রাস্তাঘাট দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। তাই বন্দরের প্রতি এটি সিটি করপোরেশনের হক।”

অনুষ্ঠানে নগরের কিশোর গ্যাংকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন মেয়র শাহাদাত হোসেন। তিনি জানান, এ সমস্যা সমাধানে সামাজিক সংগঠন ডাকবাক্স ফাউন্ডেশন সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কাজ করবে।

অনুষ্ঠানে সামাজিক সংগঠন ডাকবাক্স ফাউন্ডেশনের হয়ে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে কথা বলেন ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ খ্যাত অভিনেতা জিয়াউল হক পলাশ। তিনি জানান, ডাকবাক্স কিশোর অপরাধ দূর করতে ও নারীদের সমস্যা নিয়ে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কাজ করবে।

মেয়র শাহাদাত হোসেন আরও জানান, প্রাইমারি হেলথকেয়ার সিস্টেম চালু করা হবে এবং সিটি করপোরেশন হাসপাতালে স্বল্প মূল্যে কিডনি রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া ডাকবাক্স ফাউন্ডেশনের সহায়তায় আগামী মাস থেকে নগরের ৫টি জোনে ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টার চালু করা হবে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখায় মেয়রকে ধন্যবাদ জানান।

এতে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. নুরুল করিম, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবীব, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক মোহাম্মদ নূরল্লাহ নূরী, চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ এবং চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ারা বেগম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন।