মোর্শেদ নয়ন : নানা অনিয়ম, নিয়মবর্হিভূত ঋণ দিয়ে ডুবতে বসেছে এক সময়ের লাভজনক বেসিক ব্যাংক। বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে আবদুল হাই বাচ্চু যোগদান করার কিছুদিন পরই ব্যাংকটির অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে।
তবে বেসিক ব্যাংক ডুবতে থাকলেও একই সময়ে সমুদ্রে ভাসতে শুরু করে বাচ্চু পরিবারের ৯টি মাছ ধরার অত্যাধুনিক জাহাজ। যেগুলোর বাজার মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকার উপরে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত সাবেক সাংসদ শেখ আবদুল হাই বাচ্চু ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন। ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর স্ত্রী শেখ শিরিন আখতার, পুত্র শেখ সাবিদ হাই অনিক ও মেয়ে শেখ রাফা হাইকে সঙ্গে নিয়ে খুলেছিলেন ইডেন ফিশারিজ লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি। স্ত্রী-সন্তানদের পরিচালক হিসেবে রাখেন এ প্রতিষ্ঠানে। তার ভাই শাহরিয়ার পান্না খোলেন ক্রাউন ফিশারিজ নামের আরো একটি প্রতিষ্ঠান। কোম্পানী দুটির নামে কেনা হয় সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য ৯টি অত্যাধুনিক জাহাজ।
জানা যায়, ইডেন ফিশারিজ লিমিটেড এর নামে কেনা হয় ৭টি জাহাজ। সেগুলো হল এফভি ক্রিস্টাল-১, এফভি ক্রিস্টাল-২, এফভি কর্ণতরী, এফভি ইডেন-১, এফভি ইডেন-২, এফভি সিলভার সী-১, এফভি সীনুমচাই-২৯। বাচ্চুর ভাই পান্নার মালিকানাধীন ক্রাউন ফিশারিজ কিনে এফভি স্পিড-১ ও এফভি স্পিড-২ নামের দুইটি জাহাজ।
এদিকে, ২০০৯ সালে মাত্র চৌদ্দ কোটি টাকার সম্পদ জামানত রেখে বেসিক ব্যাংক থেকে ২শ’ ২৭ কোটি টাকা ঋণ নেয় তৎকালীন চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি ও জাতীয় পার্টি নেতা মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম পরিবার। বিনিময়ে মুরাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান ক্রিস্টাল ফিশিং এর মালিকানাধীন এফভি ক্রিস্টাল-১ ও এফভি ক্রিস্টাল-২ নামের জাহাজ দুইটির মালিকানা ঘুষ হিসেবে নেয় বাচ্চু।
সম্প্রতি নগরীর ডবলমুরিং থানায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হক বাদি হয়ে ঋণ নিয়ে আত্মসাত করার অভিযোগ ব্যবসায়ী মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মাহজাবিন মোর্শেদ দম্পতির বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন।
এ বিষয়ে জানার জন্য একাধিকবার কল করেও মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমের মুঠোফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি।
যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয় হিসেবে ইডেন ফিশারিজ লিমিটেড এর ঠিকানা দেওয়া হয় ৪২/১-ক জাহান প্লাজা, সেগুনবাগিচা। বাস্তবে সেখানে অফিসের কোনো অস্তিত্ব নেই। ব্যাংকে হিসাব খোলার সময় ইডেন ফিশারিজের ঠিকানা দেয়া হয় বনানী ডিওএইচএসের ৪ নম্বর সড়কের ২ নম্বর বাসার পঞ্চম তলা। সেটি মূলত বাচ্চুর নিজস্ব ফ্ল্যাট। যেখানে তিনি ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। মূলত ইডেন ফিশারিজ লি: এর অফিস নেয়া হয় চট্টগ্রাম সদরঘাটের ৩৩১ স্ট্রান্ড রোড, মনোয়ারা টাওয়ারের ৩য় তলায়।
বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে আবদুল হাই যোগদান করার কিছুদিন পরই ব্যাংকটি খারাপ হতে শুরু করে। ব্যাংকটির খারাপ অবস্থা সম্পর্কে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ২০১৪ সালে ব্যাংকটির অবস্থা নাজুক হয়ে পড়লে তাকে নিরাপদে পদত্যাগের সুযোগ করে দেওয়া হয়। সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা অনিয়মের জন্য তাঁকে বিচারের আওতায় আনার দাবি উঠলেও আমলে নেওয়া হয়নি। অর্থমন্ত্রীও সংসদে ও বাইরে একাধিকবার বাচ্চুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে দুদক আবদুল হাই বাচ্চুসহ পর্ষদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।