বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অটিজম মোকাবেলায় মডেল হতে পারে বাংলাদেশ

প্রকাশিতঃ ২৯ মে ২০১৬ | ৪:০৫ অপরাহ্ন

একুশে প্রতিবেদক

ranuচট্টগ্রাম: অটিজম মোকাবেলায় বাংলাদেশ সারা বিশ্বের জন্য মডেল হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ফাইট ফর উইমেন রাইটসের সভাপতি অ্যাডভোকেট রেহানা বেগম রানু।

একুশে পত্রিকাকে তিনি বলেন, অটিজমকে এক সময় পাপ বা অভিশাপ ভাবা হতো। বলা হতো, অটিস্টিক শিশুরা সমাজের বোঝা। পরিবারের কাছেও তারা ছিলো অবহেলিত, ঘৃণার পাত্র। রক্তের সম্পর্কের অটিস্টিক শিশুকেও ক্ষেত্রবিশেষে অস্বীকার করা হতো, পরিবারের সদস্য বলে পরিচয় দেয়া হতো না। কোনো পরিবারে অটিস্টিক শিশু জন্ম নিলে তাকে গোপন বা আড়াল করার চেষ্টা করা হতো। মোদ্দাকথা, অটিস্টিক শিশুদের সুষ্ঠু স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য ছিল না যথাযথ পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা এবং ব্যবস্থাপনা। কিন্তু বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অটিজম মোকাবেলায় সেইদিন আর নেই। এ নিয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টেছে। তাদের অটিজম বিষয়ক কর্মকা- সারাবিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

দক্ষ-অভিজ্ঞ প্রশিক্ষিতদের তত্ত্বাবধান, বিশেষ শিক্ষা কর্মসূচির ব্যবস্থা, প্রত্যেক শিশুর বিশেষ চাহিদা পূরণ, বিকলাঙ্গ শিশুদের আর্থিকভাবে বিশেষ ব্যবস্থার আওতায় আনা এবং মানসিক ও শারীরিক উভয় ধরনের অটিস্টিক শিশুদের উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার। অটিজম শিশু এবং প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে গৃহীত মা-মেয়ের নানা কার্যক্রম জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে পেয়েছে স্বীকৃতি, অর্জন করেছে প্রশংসা। যা বিশ্বের কাছে এখন রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

রেহানা বেগম রানু বলেন, অটিজম আক্রান্তদের অধিকার না দেয়ার অর্থ মানবাধিকার লঙ্ঘন। তারাও মেধাবী। তাদের মেধা ও শ্রমকে সব কর্মকা-ে ব্যবহারের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। মূলত এই সব বিষয় নজরে রেখে অটিজম শিশু এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।

আমরা জেনেছি, অটিজম মোকাবেলায় আরো অনেকগুলো কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সরকার। যেমন- অটিজম আক্রান্তদের স্বার্থ ও অধিকার সুরক্ষায় নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টি বোর্ড গঠন ও সেখানে তিন হাজার একশ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, যা অত্যন্ত সময়োপযোগী ও সুদূরপ্রসারী। সরকার পরিবর্তন হলেও সেবামূলক এই কার্যক্রম যেন অব্যাহত থাকে সেজন্য ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিবন্ধী শিশুদের মূলধারায় আনতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একাডেমি ফর অটিজম অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার স্থাপনের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ‘বিশেষ সফটওয়্যার’ তৈরি করে অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধীদের কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়ারও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন প্রত্যেক শিশুকে শিগগিরই ‘প্রিভিলেজ কার্ড’ দেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। সেবা-সহযোগিতায় বিশেষ অগ্রাধিকার পাবে এমন কার্ডের অধিকারীরা। যাতে চিকিৎসা, কেনাকাটা, শিক্ষা, গাড়ি পার্কিংসহ সবক্ষেত্রে তারা বিশেষ সুবিধা পাবেন।

সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে রেহানা বেগম রানু বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগে অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। যা বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু সে তুলনায় চট্টগ্রামের প্রস্তুতি অপ্রতুল। এখানে বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত বিশেষায়িত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি অটিজম বিষয়ে ব্যক্তি ও বেসরকারি উদ্যোগগুলোকে এগিয়ে দিতে পারলে চট্টগ্রামে অটিস্টিকের ভয়াবহতা মোকাবেলা করা সহজ হবে বলে মনে করেন তিনি।

নারী ও শিশুঅধিকার প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত থাকা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক তিন তিনবারের কমিশনার রেহানা বেগম রানু বলেন, একটি রাষ্ট্র তখনই কল্যাণকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়, যখন প্রত্যেক নাগরিকের জন্য যথাযথ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে যুক্ত। উন্নয়নের এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে দেশের সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে মেধাবী অটিজম শিশু এবং প্রতিবন্ধীদের সঠিক পরিবেশে গড়ে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের অটিজম বিষয়ক বোধ-বুদ্ধি এবং নানান উদ্যোগ সেই আশা জাগানিয়ার পথেই নিয়ে যাচ্ছে আমাদের।