জিন্নাত আয়ুব, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় জনবসতিপূর্ণ এলাকায় কৃষিজমিতে দুইটি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে একটির অনুমোদন থাকলেও অন্যটি সম্পূর্ণ অনুমোদনহীন। ফসলি জমি নষ্ট করে তৈরি হওয়া এই ইটভাটাগুলোর আশেপাশে রয়েছে তিন একর ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই ইটভাটাগুলো ফসলি জমি থেকে মাটি নিচ্ছে এবং ইট পোড়ানোর সময় নির্গত কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হওয়ার পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যও ধ্বংস হচ্ছে। প্রশাসনের নীরবতায় অনুমোদনহীন ইটভাটাটির কার্যক্রম বন্ধের কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
সম্প্রতি পরীরবিল এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বটতলী ইউনিয়নের পশ্চিমে পরীরবিল এলাকায় তিন ফসলি জমিতে “মোহছেন আউলিয়া ব্রিকস (এমবিএম)” নামক এই ইটভাটাটি অবস্থিত।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র কিংবা জেলা প্রশাসকের অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠেছে এই অবৈধ ইটভাটা।
ইটভাটার পাশের বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে এই অবৈধ কার্যক্রম চললেও প্রশাসন নির্বিকার। তাদের আরও অভিযোগ, ইটভাটার মালিক সামসুল আলম প্রশাসনকে “ম্যানেজ” করেই এই ভাটা চালাচ্ছেন।
২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর “অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে গতি নেই” শিরোনামে একুশে পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও এই ইটভাটার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে পরিবেশ অধিদপ্তর এই ইটভাটা উচ্ছেদের জন্য তিন মাসের সময় দিলেও বাস্তবে এর কোন প্রতিফলন ঘটেনি।
“মোহছেন আউলিয়া ব্রিকস (এমবিএম)” এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামশুল আলম জানান, অনুমোদন না থাকলেও তিনি প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে “ম্যানেজ” করেই ব্যবসা চালাচ্ছেন।
২০২১ সালে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভাটা বন্ধের নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি সবাইকে “ম্যানেজ” করে মাটি কাটা ও উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। এমনকি তিনি প্রতিবেদককে “কোথায় বলেন, একসাথে বসে চা খাব” এমন প্রস্তাবও দেন।
আইন অনুযায়ী, কৃষিজমিতে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আইনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে, বনাঞ্চলের দুই কিলোমিটার এবং ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়কের অন্তত আধা কিলোমিটারের মধ্যে কোন ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। এই আইন অমান্য করলে অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড, অন্যূন ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
কিন্তু আনোয়ারা উপজেলায় এই আইনকে উপেক্ষা করেই চলছে ইটভাটার রমরমা ব্যবসা। অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইটভাটা মালিকরা কোন প্রকার শাস্তির সম্মুখীন হন না, এবং যদি কখনও শাস্তি হয়ও, তারা কৌশলে একই স্থানে পুনরায় ইটভাটার কার্যক্রম শুরু করেন।
জানা যায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসকের অনুমোদন ছাড়াই সারাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব অবৈধ ইটভাটা বছরের পর বছর ধরে চললেও প্রশাসন কার্যত কোন পদক্ষেপ নেয় না। তাদের আরও অভিযোগ, ইটভাটার মালিকরা প্রশাসনকে ঘুষ দিয়ে “ম্যানেজ” করে এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
আনোয়ারার অবৈধ ইটভাটার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন ফয়সাল জানান, আনোয়ারায় দুইটি ইটভাটা রয়েছে, যার মধ্যে একটির অনুমোদন আছে এবং অন্যটি অনুমোদনহীন।
তিনি আরও বলেন, এই দুইটি ইটভাটাই স্থানীয় পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে এবং বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. মোজাহিদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আনোয়ারা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আকতারকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি এটি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে এই বিষয়ে অবগত করা হলে তিনি জানান যে, তিনি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেবেন।