বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

অহংকারের যুদ্ধে মোদির চাল কি হিতে বিপরীত?

নজরুল কবির দীপু | প্রকাশিতঃ ১১ মে ২০২৫ | ৬:০৫ অপরাহ্ন


ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান টানাপোড়েন কিংবা ছোটখাটো সংঘাত নতুন কোনো বিষয় নয়। ১৯৪৭ সাল থেকে এই দুই প্রতিবেশী দেশ বহুবার যুদ্ধ ও সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এসব লড়াই বেশিরভাগ সময়েই স্বল্পস্থায়ী হয় এবং আলোচনার মাধ্যমে বা তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় শেষ হয়। ১৯৬৫ সালের ১৭ দিনের যুদ্ধ ছিল এমনই এক বড় সংঘাত। সরাসরি যুদ্ধ থামলেও, তাদের মধ্যে কথার লড়াই আর স্নায়ুযুদ্ধ বছরের পর বছর ধরে চলছে।

আশ্চর্যজনকভাবে, ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের ফল প্রায়শই একই রকম হয়। যুদ্ধ শেষ হলে কাশ্মীরের আজাদ অংশ ‘আজাদ’ই থাকে, আর ভারতীয় কাশ্মীর ভারতের অংশ হিসেবেই পরিচিতি পায়। অসংখ্য সাধারণ মানুষের প্রাণহানি ঘটে, অথচ সামরিক কর্মকর্তারা বীরত্বের পদক পান। এরপর স্থগিত হয়ে যাওয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টগুলো (যেমন: আইপিএল, পিএসএল) আবার শুরু হয়। তাই প্রশ্ন ওঠে, এই যুদ্ধগুলো আসলে কেন শুরু হয়?

বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে যুদ্ধ সাধারণত ভূখণ্ড দখলের উদ্দেশ্যে হয়। যেমন ইউক্রেনে রাশিয়া রুশভাষী জনগোষ্ঠীর জন্য জমি দখল করতে চায়, কিংবা ফিলিস্তিনে ইসরায়েল ইহুদি বসতি স্থাপনের জন্য জমি দখল করে। কিন্তু এবারের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ছিল ভিন্ন প্রকৃতির। এখানে ভূখণ্ড দখলের কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।

মূলত, এবারের সংঘাতের সূত্রপাত গত মাসে কাশ্মীরের ভারত-নিয়ন্ত্রিত অংশে এক পর্যটকবহরে ভয়াবহ হামলার মাধ্যমে, যেখানে ২৫ জন ভারতীয় ও ১ জন নেপালি নাগরিক নিহত হন। ভারত এর দায় পাকিস্তানের ওপর চাপায়, যদিও ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করে স্বাধীন তদন্তের দাবি জানায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কথার যুদ্ধ শুরু হয়। এই পরিস্থিতি হয়তো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেত।

তবে, পাকিস্তানের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওপর উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলোর প্রবল চাপ তৈরি হয়। এটিকে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে ডাকা হয়েছিল। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী মোদি উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী এবং ব্যাপক সংখ্যক হিন্দু ভোটারের সমর্থনে বারবার নির্বাচিত হচ্ছেন, তাই কাশ্মীরে হামলার কোনো জবাব না দিলে তাঁর ভোটব্যাংকে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা ছিল। পাকিস্তানের সাবেক তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরীর মতে, মোদি এখন রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা এবং ভোটের হার কমে যাচ্ছে। তাই কাশ্মীরের সীমানা বদলে দিয়ে নিজের উত্তরাধিকার নিশ্চিত করতে চান তিনি। এই কারণে তিনি সামরিক বাহিনীকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন। সহজ ভাষায়, পাকিস্তানকে শায়েস্তা করে মোদির ‘হিন্দু অহং’ এবং তাঁর হিন্দু ভোটব্যাংক সুরক্ষিত রাখাই ছিল এই সংঘাতের প্রধান লক্ষ্য। ফাওয়াদ চৌধুরী মনে করেন, মোদি যুদ্ধক্ষেত্র আরও বিস্তৃত করবেন।

তবে, মোদির এই ‘হিন্দু অহং’-এর লড়াই সম্ভবত তাঁর জন্য ভালো ফল বয়ে আনেনি। পাকিস্তান ভারতের হামলার আঁচ পেয়েছিল এবং তাদের সামরিক বাহিনী যেকোনো সংঘাত মোকাবেলায় সব সময় প্রস্তুত থাকে। পাকিস্তানি সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির একটি ট্যাংকের ওপর উঠে সেনাদের উদ্দেশে বক্তৃতা দিয়ে বলেন, ‘ভারতের যেকোনো ধরনের আগ্রাসনের জবাব হবে তৎক্ষণাৎ, কঠিন এবং আরও শক্তিশালী।’ জাতীয় নিরাপত্তাবিশ্লেষক ও অধ্যাপক ভরত কারনাড মনে করেন, পুরো পরিস্থিতি এখন মুনিরের হাতে, কারণ তাঁর মতে, মুনির একটু উগ্র ধাঁচের মানুষ। জন্মলগ্ন থেকেই ‘ভারত-ভীতি’ দেখিয়ে পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তারা দেশ শাসন করে আসছেন। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে অধিকাংশ সংঘাত হওয়ায় এটি তাদের ‘কাশ্মীর তাস’ নামে পরিচিত। ফলে, পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তাদের ‘কাশ্মীর তাস’ এবং মোদির ‘হিন্দু অহং’ একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল।

যুদ্ধ ভারতই ঘোষণা করে শুরু করেছিল। কিন্তু যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি দেখে অনেকেই প্রশ্ন করছেন, ভারত কি তাদের প্রস্তুতি সঠিক রেখেছিল? যুদ্ধ কি ভারতের প্রত্যাশা অনুযায়ী এগিয়েছিল, নাকি মোদির জন্য এটি উল্টো ফল এনেছে?

যুদ্ধের শুরুতে ভারত দ্রুত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে কয়েকটি ‘কাশ্মীরি প্রশিক্ষণ শিবির’ ধ্বংস করে। ভারত দাবি করে, এগুলি থেকেই কাশ্মীরে হামলাকারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যদি পাকিস্তান এই প্রাথমিক হামলা নীরবে মেনে নিত, তাহলে হয়তো যুদ্ধ সেখানেই থেমে যেত। আর মোদি তাঁর ‘অপারেশন সিঁদুরের’ সাফল্য দেখিয়ে ‘হিন্দু অহং’ পুনরুদ্ধার করতে পারতেন। কিন্তু পাকিস্তান তাদের জাতীয় সম্মান বিসর্জন দিতে রাজি ছিল না।

পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাল্টা আক্রমণ চালায়। যুদ্ধের প্রথম পর্যায়টি মূলত অসামরিক লক্ষ্যবস্তুকে কেন্দ্র করে সীমাবদ্ধ থাকলেও, যুদ্ধবিমান, ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র – সবই ব্যবহৃত হয়েছিল। রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, বিমান যুদ্ধে পাকিস্তান এগিয়ে ছিল। তারা চীনের তৈরি জে-১০সি ফাইটার বিমান দিয়ে ভারতের দুটি রাফাল যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করে। এই প্রথম কোনো যুদ্ধে চীনের জে-১০সি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা হলো, যা চীনের জন্য একটি বড় সুবিধা এনে দিল। উল্লেখ্য, পাকিস্তানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ কৌশলগত ও বিনিয়োগ অংশীদার হলো চীন, যাদের নিজস্ব পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহৃত হয়েছে। কাশ্মীর নিয়ে চীনেরও আলাদা স্বার্থ আছে, কারণ চীনের নিয়ন্ত্রণে আছে ভারতের সীমান্তঘেঁষা কাশ্মীরের অঞ্চলটি। ফাওয়াদ চৌধুরী বলেন, ‘চীনের এই সংঘাত থেকে দূরে থাকার কোনো উপায় নেই। ওই অঞ্চলে সীমান্ত পরিবর্তন নিয়ে ভারতের যদি কোনো নিজস্ব পরিকল্পনা থাকে, সেটা চীন মানার কথা নয়। ফলে এই সংঘাত কেবল ভারত-পাকিস্তানের ব্যাপার নয়, এর সঙ্গে চীনের স্বার্থও জড়িত।’

ড্রোন যুদ্ধে উভয় দেশই সমানতালে ছিল। ভারতের ইসরায়েলি ড্রোন এবং পাকিস্তানের তুরস্কের তৈরি ড্রোন ব্যবহার করা হয়। উভয় দেশই নিজেদের তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে, যার প্রয়োগও সমানতালে দেখা যায়। কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা জম্মুতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছিল, “জম্মুর আকাশে উড়ে যাচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে লাল বল, বিয়ের রোশনাই নাকি? সংবিত ফিরল হ্যাঁচকা টানে, ওগুলো সব মিসাইল!” ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ মূলত একে অপরের জায়গা দখলের জন্য হয়েছিল। কিন্তু এবার জায়গা নিয়ে যুদ্ধ না হওয়ায় ট্যাংকের ব্যবহার তেমন দেখা যায়নি।

যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায়ে উভয় পক্ষ একে অপরের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করে। তখন আশা করা হচ্ছিল, বিশ্ব শক্তিগুলো পারমাণবিক অস্ত্রধারী এই দুই দেশকে আরও বিস্তৃত হওয়ার আগেই থামাবে। হলোও তা-ই। যুক্তরাষ্ট্র অতীতে ২০১৬ ও ২০১৯ সালে কাশ্মীর নিয়ে বড় সংঘর্ষের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। তবে এবার মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছে একদল অপ্রত্যাশিত খেলোয়াড় – উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো। বিশেষ করে সৌদি আরব এখন শান্তি প্রতিষ্ঠায় নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবেইর সম্প্রতি হঠাৎ ভারত সফরে এসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁদের মূল উদ্দেশ্য ছিল, উত্তেজনা প্রশমনে সাহায্য করা। সৌদি আরবের পক্ষে এই শান্তির চেষ্টা খুবই স্বাভাবিক। কারণ, সৌদিতে বর্তমানে প্রায় ২৬ লাখ ভারতীয় শ্রমিক কাজ করেন এবং সেখানে আছেন প্রায় সমানসংখ্যক পাকিস্তানিও। কাশ্মীর হামলার সময় মোদি জেদ্দায় ছিলেন, সেখানে তিনি ‘ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডর’ নিয়ে আলোচনা করছিলেন এবং ১০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি নিয়েও কথা বলছিলেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উপমহাদেশের চারপাশের কূটনৈতিক ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন এসেছে। উপসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব এখন অনেক বেড়েছে। আগে সেখানে আদর্শ ও ধর্ম ছিল পররাষ্ট্রনীতির চালিকা শক্তি, এখন সেখানে জায়গা নিয়েছে স্বার্থ। এরই উদাহরণ হলো সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনা। একসময় বৈশ্বিক ক্ষমতার কেন্দ্র ছিল শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের মতো পরাশক্তিগুলো। এখন সৌদি আরব ছাড়াও কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এখানে যুক্ত। তবে তারা তাদের পুরোনো কায়দামতো এখন আর ধর্মীয় সংহতির দোহাই দিয়ে আগুনে ঘি ঢালছে না। কাশ্মীর সমস্যায় কাতার ও আরব আমিরাত পাকিস্তানকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। এমনকি ভারতের পক্ষেও অবস্থান নিয়েছে কাতার, অন্তত ভারতের সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী এমনটাই বলা হচ্ছে। বহু বছর ধরে পাকিস্তান ধরেই রেখেছিল যে মুসলিম দেশ হিসেবে উপসাগরীয় দেশগুলো তার পাশে দাঁড়াবেই। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে এই ধারণা বদলানো ছাড়া পাকিস্তানের উপায় নেই। ধর্মীয় পার্থক্য ও আদর্শগত অমিল থাকা সত্ত্বেও ভারত আজ উপসাগরীয় অঞ্চলে এক প্রভাবশালী বড় শক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বিষয়টি এখানেই থেমে নেই। ধর্ম, আদর্শ বা মূল্যবোধ নয়; এখানে সবকিছুর কেন্দ্রে আছে কেবল স্বার্থ। পাকিস্তান যেমন মুসলিম দেশ, তার প্রতিবেশী ইরানও শিয়া মুসলিম দেশ। পাকিস্তানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিয়া মুসলিম বাস করেন। কিন্তু ইরানের সঙ্গে পাকিস্তানের চেয়ে ভারতের সম্পর্কই তুলনামূলকভাবে বেশি ভালো বলে উল্লেখ করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতীয়দের উদ্দেশে আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছে তেহরান। গত বুধবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসলামাবাদ থেকে সরাসরি দিল্লিতে এসে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেন। ইরানের সঙ্গে ভারতের বহু পুরোনো অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, যার একটি বড় অংশ চাবাহার বন্দরের উন্নয়ন ও পরিচালনার সঙ্গে জড়িত। এই প্রকল্পে ভারত ইতিমধ্যে ১২ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য দিয়েছে আরও ২৫ কোটি ডলার ঋণ। উপসাগরীয় অনেক দেশের মতো ইরানও এখন ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারত্বকে গুরুত্ব দিচ্ছে। অস্ট্রেলীয় বিশ্লেষক সামিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘স্নায়ুযুদ্ধের সময় দেশগুলোর মধ্যে যে শক্তিশালী মৈত্রী দেখা যেত, তা এখন আর নেই। এখন তা দ্রুত বদলে যায়। ভারত-পাকিস্তান দুই দেশই এখন অন্বেষণ করছে যে কে কার থেকে কী পেতে পারে।’

এখন যুদ্ধ থেমে যাওয়ায় জয়-পরাজয়ের হিসাব শুরু হবে। ভারতীয় বিরোধী দল যুদ্ধের সময় চুপচাপ সমর্থন জানালেও এখন প্রশ্ন তুলবে, এই যুদ্ধে ভারত কী পেল? যেভাবে পাকিস্তান ভারতীয় হামলার জবাব দিয়েছে, তাতে বলা যায়, তারা এই যুদ্ধ থেকে ভারতের চেয়েও বেশি সমীহ আদায় করে নিয়েছে। এখন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘হিন্দু অহং’-এর কী হবে? মোদি সম্ভবত এই যুদ্ধ লাগিয়ে তাঁর এবং ভারতের সম্মানের অনেক ক্ষতি করেছেন। এমনিতেই মোদির দলের লোকসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই; বিজেপি বিহারের নীতীশ কুমারের জনতা পার্টির সঙ্গে জোট করে সরকার চালাচ্ছে। গত নির্বাচনে মোদির দল অনেক আসন হারিয়েছিল।

এবার এই যুদ্ধের পর মোদির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। যুদ্ধের লাভ-ক্ষতি এবং মোদির নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধী দল, এমনকি হিন্দুত্ববাদী দলগুলো থেকেও প্রশ্ন আসতে পারে। অনেক বিশ্লেষকের শঙ্কা যে ভারত-পাকিস্তান হয়তো ইতিমধ্যেই এমন জায়গায় চলে গেছে, যেখান থেকে ফেরত আসা কঠিন। এই উত্তপ্ত অবস্থায় সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হচ্ছে ভারতের নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত রেখে ভারতের পক্ষে নতুন করে আলোচনার চেষ্টা। এর জবাবে পাকিস্তান গত ২৪ এপ্রিল ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তি বাতিল করে দিয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ী, কাশ্মীর সীমান্তের বর্তমান ‘লাইন অব কন্ট্রোল’ ছিল দুই দেশের মধ্যে একপ্রকার অস্থায়ী সীমা। এখন তা শুধু অস্ত্রবিরতির রেখা। আন্তর্জাতিক আইনে, এ ধরনের সীমানা যেকোনো পক্ষের পক্ষে সামরিকভাবে বদলে ফেলা সম্ভব। অনেকেই হয়তো বলবেন, মোদির রাজনীতির শেষের শুরু সম্ভবত এবার হলো। এখন যদি কূটনৈতিকভাবে উত্তেজনা সাময়িকভাবে কমানো গেলেও তা কোনো স্থায়ী সমাধান হবে না। এখন থেকে এই অঞ্চলে শান্তি রক্ষা করতে হলে চাই লাগাতার আন্তরিক এবং সতর্ক মধ্যস্থতা।

লেখক : ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, একুশে পত্রিকা।