
অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত প্রথম বাজেটেও ঋণনির্ভরতা থেকে বের হওয়ার কোনো দৃশ্যমান চেষ্টা দেখা যায়নি, যার ফলে দেশের ঋণের বোঝা আরও বাড়তে চলেছে। সরকারের প্রাক্কলন অনুযায়ী, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে দেশের মোট ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াতে পারে ২৩ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকায়।
অর্থ বিভাগের ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে’ করা প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, বর্তমানে সরকারের প্রায় ২১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। এই ঋণের বোঝা ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ২৬ লাখ ৩ হাজার কোটি এবং ২০২৭-২৮ অর্থবছরে ২৮ লাখ ৯৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে। এই হিসাবে, পাঁচ বছরের ব্যবধানে দেশে ঋণের স্থিতি ১০ লাখ কোটি টাকার বেশি বাড়বে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ঋণ বাড়তে থাকায় সরকারের পরিচালন ব্যয়ের বড় একটি অংশ সুদ পরিশোধেই চলে যাচ্ছে। ব্যয় মেটাতে সরকারকে ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল হতে হচ্ছে, যা অর্থনীতির জন্য একটি বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাদের মতে, সরকারের ঋণনির্ভর প্রকল্প গ্রহণের প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোয় মনোযোগ দেওয়া জরুরি।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের ব্যাখ্যা হলো, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আহরণ আশানুরূপ না হওয়ায় এবং উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে অবকাঠামো তৈরির প্রয়োজনে সরকারকে ঋণ গ্রহণ করতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানানো হয়।
তবে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নিম্নমধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ায় সহজ শর্তে বিদেশি ঋণ (কম সুদের হার, দীর্ঘ পরিশোধকাল) পাওয়ার সুযোগ কমে আসছে। ফলে সরকারকে ট্রেজারি বন্ড ও বিল এবং জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্পের মতো অভ্যন্তরীণ উৎসের ওপর বেশি নির্ভর করতে হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন এ বিষয়ে বলেন, সরকারের উচিত ব্যয় কমিয়ে এবং বিদেশি উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে ঘাটতি মেটানোয় জোর দেওয়া, যাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে তুলনামূলক কম ঋণ নিতে হয়।
তিনি আরও বলেন, রাজস্ব আহরণ, রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ এবং ঋণ ব্যবস্থাপনায় কার্যকর সংস্কার আনা না গেলে ঋণের স্থিতি ও সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি ভবিষ্যতে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে।