
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পৃথক্করণের একটি অধ্যাদেশকে কেন্দ্র করে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সরকারের দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করেছে। এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগসহ অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরতরা শনিবার থেকে সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ বা সর্বাত্মক কর্মবিরতির হুমকি দেওয়ায় দেশের আমদানি-রপ্তানি ও রাজস্ব আদায় কার্যক্রমে অচলাবস্থা তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি ও তৈরি পোশাকের রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে উৎপাদন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা।
দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিএসআরএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমের আলীহুসাইন বলেন, “কাস্টমস কার্যক্রম বন্ধ থাকলে সময়মতো চালান খালাস করা সম্ভব হবে না, এতে খরচ বাড়বে এবং বাজারে সরবরাহ বিঘ্নিত হবে। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই দ্রুত এ সংকটের সমাধান নিশ্চিত করার।”
গত ১৩ মে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে এনবিআরকে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ করতে অধ্যাদেশ জারির পর থেকেই ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে আন্দোলন করে আসছেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
ঈদের ছুটির পর এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের পদত্যাগের দাবিতে তাদের আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়। আন্দোলনরতদের অভিযোগ, অধ্যাদেশটি সংশোধনে সম্প্রতি যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাতে তাদের কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি। এর প্রতিবাদে তারা শনিবার থেকে লাগাতার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’-এর ঘোষণা দেন।
এই অচলাবস্থা নিরসনে বৃহস্পতিবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এনবিআর চেয়ারম্যান ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করলেও সেখানে আন্দোলনকারীদের কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, “যারা আন্দোলন করছেন, তাদের অনুরোধ করেছি কর্মসূচি প্রত্যাহার করার জন্য। দেশের স্বার্থে তারা এটা শুনবেন বলে আশা করছি। আগামী সপ্তাহে আরও একটি সভা করে চূড়ান্ত সমাধান করা হবে।”
তবে বৈঠকে উপস্থিত এনবিআরের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, অর্থ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, আন্দোলন প্রত্যাহার না করলে সরকার কঠোর অবস্থানে যাবে এবং চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা হবে না।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ মনে করেন, আন্দোলনকারীরা সংস্কার চান না এবং অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি তদন্ত থামানোর জন্য তারা চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, “এভাবে অচলাবস্থা তৈরি করা রাষ্ট্রদ্রোহী কাজ।”
বিদ্যমান অচলাবস্থার কারণে এরই মধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের শুল্কায়ন কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে এবং রাজস্ব আহরণ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অর্থবছরের শেষ প্রান্তে এসে এই আন্দোলন লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে থাকা রাজস্ব আদায়ে আরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।