
ব্যাপক মূলধন ঘাটতির কারণে দেশের সংকটে থাকা পাঁচটি ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার এই ঘাটতি মেটাতে সরকার ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা মূলধন জোগান দেবে এবং বাকি অর্থ নতুন কৌশলগত অংশীদারদের কাছে শেয়ার বিক্রি করে সংগ্রহ করা হবে।
একীভূত করার জন্য চিহ্নিত ব্যাংকগুলো হলো— এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল), ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানান, ব্যাংকগুলোর বিপুল পরিমাণ মূলধন ঘাটতির কারণেই মূলত একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “এত বড় মূলধন ক্ষতি নিয়ে এই ব্যাংকগুলো চলতে পারে না। আমরা ইতোমধ্যে ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার মাধ্যমে মালিকানায় অংশ নিতে সরকারকে অনুরোধ করেছি।”
গভর্নর আরও জানান, একীভূতকরণের এই প্রক্রিয়া চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে আমানতকারীরা তাদের নিজ নিজ ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন চালিয়ে যেতে পারবেন। তবে তিনি নিশ্চিত করেছেন, একীভূতকরণের পর নিচের স্তরের কর্মীদের চাকরি সুরক্ষিত থাকলেও শীর্ষ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তা হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই পাঁচটি ব্যাংকের সম্মিলিত সম্পদের তুলনায় দায়ের পরিমাণ ৩৮ হাজার ৩১৬ কোটি টাকারও বেশি। একটি নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের পর্যালোচনায় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে: এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২৮%, এসআইবিএলের ৬০% এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের प्रत्येকের খেলাপি ঋণের হার ৯৫%।
বিশেষজ্ঞরা এই একীভূতকরণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “একীভূতকরণের আগে আইন অনুযায়ী সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে তাদের নিজস্ব সমাধান পরিকল্পনা চাওয়া উচিত ছিল। এক্সিম ও এসআইবিএলের মতো ব্যাংক, যারা তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে আছে এবং একীভূত হতে অনিচ্ছুক, তাদের সেই সুযোগ দেওয়া হয়েছিল কি না, তা স্পষ্ট করতে হবে।”
তবে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, দেশে ব্যাংকের অতিরিক্ত সংখ্যা এবং এই প্রতিষ্ঠানগুলোর নাজুক অবস্থার কারণে একীভূতকরণের সিদ্ধান্তটি যৌক্তিক। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, নতুন প্রতিষ্ঠানটির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি টেকসই মডেল তৈরি করতে হবে।
এই প্রক্রিয়াটি ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর অধীনে সম্পন্ন করা হতে পারে, যেখানে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকটাপন্ন ব্যাংককে অস্থায়ীভাবে সরকারি মালিকানায় নিয়ে আসতে পারে এবং ‘ব্রিজ ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এর সমাধান করতে পারে।