
দেশের নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে বড় ধস নেমেছে; সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে যা সবচেয়ে খারাপ। এবার গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৮৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ফলাফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ এবং শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
বৃহস্পতিবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি জানিয়েছে, ২০২০ সাল থেকে প্রকাশিত ফলাফলের মধ্যে এ বছরের ফলই সবচেয়ে খারাপ। এর আগের প্রতি বছর পাসের হার ৮০ শতাংশের বেশি ছিল। এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা গতবারের চেয়ে ৩৮ হাজার ৮২৭ জন কমেছে।
ফলাফল বিশ্লেষণে খারাপ ফলের পেছনে মূলত তিনটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে: শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি, গণিতে কম পাসের হার এবং উত্তরপত্র মূল্যায়নে কঠোরতা।
ক্লাস কম, শিখন ঘাটতি
এবারের পরীক্ষার্থীরা তাদের মাধ্যমিক জীবনের বড় একটি অংশ শ্রেণিকক্ষের বাইরে কাটিয়েছে। ২০২০ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে থাকাকালীন করোনা মহামারির কারণে দেড় বছরসহ বিভিন্ন সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণেও অনেক দিন ক্লাস হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিখন ঘাটতি নিয়েই তারা পরীক্ষায় অংশ নেয়, যা ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গণিতের ধাক্কা
এবারের ফলাফলে গণিত বড় প্রভাব ফেলেছে। পূর্ণ পাঠ্যসূচিতে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় গণিতের প্রশ্ন ‘কঠিন’ হওয়ার অভিযোগ ছিল। ঢাকা বোর্ডের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, যেখানে ইংরেজি, বাংলা, পদার্থ বা রসায়নের মতো বিষয়ে পাসের হার ৮৮ থেকে ৯৭ শতাংশের মধ্যে, সেখানে গণিতে পাসের হার মাত্র ৭৫ দশমিক ১৪ শতাংশ। বাধ্যতামূলক বিষয় হওয়ায় গণিতের এই ফল সার্বিক ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে।
মূল্যায়নে ‘কড়াকড়ি’
এ বছর উত্তরপত্র মূল্যায়নে অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি ‘কড়াকড়ি’ ছিল বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির সাংবাদিকদের বলেন, পাসের হার বাড়ানো বা কমানোর কোনো লক্ষ্য তাদের ছিল না।
তিনি বলেন, “আমাদের কোনো টার্গেট ছিল না যে পাসের হার এত করব, বাড়াব, নাকি কমাব। আমাদের মিশন ছিল পরীক্ষা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা।” মূল্যায়ন যথাযথভাবেই সম্পন্ন হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ফলাফলের অন্যান্য দিক
* সেরা রাজশাহী, পিছিয়ে বরিশাল: পাসের হারে ৭৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ নিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে রাজশাহী বোর্ড। আর ৫৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ পাস নিয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড।
* মেয়েদের জয়জয়কার: এবারও পাসের হার ও জিপিএ-৫ উভয় ক্ষেত্রেই ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে আছে। মেয়েদের পাসের হার প্রায় ৭১ শতাংশ, ছেলেদের ৬৫ শতাংশের বেশি। জিপিএ-৫ পাওয়াদের মধ্যে ৬৬ হাজার ৭৮০ জন ছাত্রী এবং ৫৮ হাজার ২৩৮ জন ছাত্র।
* প্রাতিষ্ঠানিক ফল: এ বছর শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমে ৯৮৪টিতে দাঁড়িয়েছে, যা গতবার ছিল ২ হাজার ৯৬৮টি। অন্যদিকে, একজনও পাস করতে পারেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৮৩টি বেড়ে ১৩৪টি হয়েছে।
সার্বিক ফলাফল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, পাস-ফেলকে বড় করে না দেখে শিক্ষার্থীরা যথাযথ দক্ষতা অর্জন করতে পারছে কি না, সেটিতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।