
‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে মতানৈক্যের মধ্যেই আজ থেকে মাঠে গড়াচ্ছে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দলের ঘোষিত কর্মসূচি। এ পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে বিভক্তি দৃশ্যমান হওয়ার পাশাপাশি রাজনীতিতে নতুন অস্থিরতার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
জামায়াতসহ কর্মসূচিতে যাওয়া দলগুলোর দাবি, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠা এবং সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ কয়েকটি সংস্কার ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগেই হতে হবে। অন্যদিকে বিএনপি মনে করে, সাংবিধানিক বিষয়গুলো নতুন সংসদ দ্বারা সমাধান করা উচিত।
এ অবস্থায় দলগুলোর রাজপথে নামার সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকার এবং বিএনপির মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোও।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা চলমান থাকা অবস্থায় রাজপথে আন্দোলনের আহ্বান অযৌক্তিক। তিনি বলেন, “যারা কর্মসূচি দিয়েছেন, তারাও ওই আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। এটি আলোচনার প্রতি অসম্মান দেখানোর শামিল। তবে গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে তারা কর্মসূচি দিতেই পারে।”
তবে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, “আমরা এটাকে স্ববিরোধী মনে করি না। আমরা মনে করি, জনমতকে মজবুত করতে এই কর্মসূচি। এটি ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আরও সহায়ক হবে।”
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “যেগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে সমাধানের পথে আছি, একই বিষয় রাজপথে নেওয়া হলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এবং দলগুলোর মধ্যে সন্দেহ-অবিশ্বাস তৈরি হতে পারে।”
১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম এই কর্মসূচিকে ‘নির্বাচন প্রলম্বিত করার চক্রান্ত’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “ঐকমত্য কমিশনে পিআর নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। মাঠ গরম করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার জন্যই এ ধরনের আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে।”
জানা গেছে, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরির আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, “দাবিগুলোর বিষয়ে রাজনৈতিক পক্ষগুলোকে একে অপরকে ছাড় দিতে হবে। অন্যথায় দেশের জন্য সমূহ সংকট তৈরি হবে, যা সবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ মনে করেন, সাম্প্রতিক বিভিন্ন নির্বাচনে ভালো ফলের পর ইসলামী দলগুলো এই কর্মসূচির মাধ্যমে রাজনীতিতে তাদের শক্ত অবস্থান জানান দিতে চাইছে।