
দেশে গ্যাসের তীব্র সংকট মেটাতে দ্রুত সরবরাহ বাড়াতে আরও একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে সরকার।
তবে দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে এ ধরনের টার্মিনালের ঝুঁকি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের আপত্তি সত্ত্বেও ‘দ্রুততম সময়ে’ গ্যাস পেতে এই পথেই হাঁটছে পেট্রোবাংলা। কক্সবাজারের মহেশখালীতে ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার এই টার্মিনাল নির্মাণের দরপত্র চলতি মাসেই আহ্বান করা হবে বলে জানা গেছে।
জ্বালানি বিভাগ বলছে, দেশে বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের ঘাটতি প্রায় দেড় হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এই ঘাটতির কারণে শিল্প-কারখানাগুলো উৎপাদনে যেতে পারছে না এবং বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, “ঘাটতি মেটাতে দ্রুত ও কম সময়ে সরবরাহ বাড়াতে ভাসমান এলএনজি টার্মিনালটি নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ টানতে হলে দেশে গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ প্রয়োজন। আমরা চাই ১২-১৮ মাসের মধ্যে টার্মিনালটি উৎপাদনে আনতে।”
পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, নতুন টার্মিনাল নির্মাণের প্রাক-সমীক্ষার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কারণে বাংলাদেশের মতো দুর্যোগপ্রবণ দেশে ভাসমান টার্মিনালে গ্যাস সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়। টেকসই সমাধানের জন্য সরকারের উচিত ভূমিভিত্তিক (ল্যান্ডবেজ) টার্মিনাল নির্মাণ এবং দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানে বিনিয়োগ বাড়ানো।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, “যেভাবে প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে, তাতে ভাসমান টার্মিনালে সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় বাধা তৈরি করছে। সরকারের উচিত স্থানীয় গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধানে টেকসই বিনিয়োগের দিকে নজর দেওয়া।”
আরেক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল আলম মনে করেন, ভাসমান কিংবা ল্যান্ডবেজ এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ মূলত আমদানি জোরদারের পরিকল্পনা, যা দেশের জন্য একটি ব্যয়বহুল এবং ঝুঁকিপূর্ণ উদ্যোগ।
দেশে বর্তমানে মহেশখালীতে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল চালু রয়েছে, যেগুলোর সম্মিলিত সরবরাহ সক্ষমতা ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট। নতুন টার্মিনালটি হলে এই সক্ষমতা ১ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটে দাঁড়াবে।