
‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর ডাকা যুগপৎ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
জামায়াতের সঙ্গে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক কয়েকটি দল রাজপথে থাকলেও দেশের বৃহত্তম কওমি সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বিএনপির দিকেই ঝুঁকে আছে, যা দেশের রাজনীতিতে একটি নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
নির্বাচনের আগে জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির দাবিতে জামায়াতের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি এবং চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন।
অন্যদিকে, হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতৃত্ব জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদী-এর আদর্শের বিরোধিতার কারণে এই কর্মসূচির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তাদের সঙ্গে বিএনপির দৃশ্যমান সুসম্পর্ক রয়েছে এবং হেফাজত-সংশ্লিষ্ট নিবন্ধিত দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বিএনপির সঙ্গেই রয়েছে।
আদর্শিক দ্বন্দ্ব ও নতুন ভাবনা
হেফাজতে ইসলামের আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী সম্প্রতি জামায়াতকে ‘ভণ্ড ইসলামী দল’ আখ্যায়িত করে বলেন, “জামায়াত ক্ষমতায় এলে কওমি মাদ্রাসা থাকবে না।” জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের এসব বক্তব্যকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উল্লেখ করেছেন।
তবে হেফাজতের ভেতরেই ভিন্ন সুর রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হেফাজত-সংশ্লিষ্ট এক নেতা জানান, প্রবীণ নেতারা আদর্শিক কারণে জামায়াত-বিরোধী হলেও তরুণ প্রজন্মের আলেমরা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, “মুরব্বিরা জামায়াতের পরিবর্তে বিএনপির সঙ্গে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন, কিন্তু বিএনপির কী আকিদা তা স্পষ্ট করতে পারছেন না।”
এই বিভক্তির মধ্যেই জামায়াতের সঙ্গে আন্দোলনে যাওয়া দলগুলোর বেশ কয়েকজন নেতা হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও রয়েছেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশ খেলাফতের আমির মাওলানা মামুনুল হক এবং খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমেদ আবদুল কাদের অন্যতম।
হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী বলেছেন, হেফাজত অরাজনৈতিক চরিত্র বজায় রাখবে। সংগঠন-সংশ্লিষ্ট নেতারা কোন দিকে যাবেন, সেটি তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।
বিএনপি ও হেফাজতের নৈকট্য
জামায়াতের কর্মসূচির বিপরীতে সম্প্রতি বিএনপির সঙ্গে হেফাজতের যোগাযোগ বেড়েছে। গত আগস্টে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এবং সালাহউদ্দিন আহমেদ হাটহাজারীতে হেফাজতের সদরদপ্তরে যান। এর আগে এপ্রিলে মহাসচিব সাজিদুর রহমানসহ হেফাজতের জ্যেষ্ঠ নেতারা বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বৈঠক করেন।
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ অবশ্য বলেছেন, এটি ছিল ‘সৌহার্দ্যের বার্তা’ দেওয়ার সফর, এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই।
ইসলামী আন্দোলনের অবস্থান পরিবর্তন
আওয়ামী লীগ শাসনামলে জামায়াতের কড়া সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিল ইসলামী আন্দোলন। দলটির জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম প্রায়ই জামায়াতের সমালোচনা করতেন। কিন্তু পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবিতে দলটি এখন জামায়াতের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। দলটির মহাসচিব ইউনূস আহমাদ বলেছেন, “জোট হয়নি, তবে আমরা পিআরের দাবিতে কাছাকাছি রয়েছি।”
বাংলাদেশ খেলাফতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন (হেফাজতেরও নেতা) বলেন, এটি জোট নয়, বরং জুলাই সনদ বাস্তবায়নে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন।