বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

নির্বাচনকে ঘিরে ভাঙছে ‘জুলাই’ জোট, চলছে নতুন মেরুকরণের হিসাব

বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতৃত্বে পৃথক জোটের তৎপরতা
একুশে প্রতিবেদক | প্রকাশিতঃ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৯:০২ পূর্বাহ্ন


আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়ন এবং নির্বাচন পদ্ধতির মতো ইস্যুতে মতবিরোধের জেরে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) পৃথক জোট গঠনের পথে হাঁটছে, যা দেশের রাজনীতিতে একটি নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দলগুলো এখন পুরোপুরি নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছে এবং পর্দার আড়ালে জোট গঠন ও আসন সমঝোতা নিয়ে তৎপরতা চালাচ্ছে।

বিএনপি-জামায়াতের মতবিরোধ ও পশ্চিমা কূটনীতিকদের ভূমিকা

বিএনপি চাইছে নির্বাচনের পর নতুন সংসদ জুলাই সনদের সাংবিধানিক সংস্কারগুলো সম্পন্ন করুক। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী ও তাদের মিত্ররা নির্বাচনের আগেই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি চালুর দাবিতে মাঠে নেমেছে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, এই দুই দলের মধ্যকার মতবিরোধ নিরসনে পশ্চিমা কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা চেষ্টা করছেন এবং উভয় দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে নিউইয়র্ক সফরে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অন্তর্ভুক্তি দলগুলোর মধ্যে আস্থা ফেরানোর একটি প্রচেষ্টা হতে পারে।

জোট গঠনের নানা হিসাব

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রধান দলগুলো নিজেদের বলয় ভারি করতে ছোট দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টা করছে।

বিএনপির কৌশল: বিএনপি তাদের পুরোনো মিত্রদের ধরে রাখার পাশাপাশি জামায়াত-বিরোধী হিসেবে পরিচিত ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে। সম্প্রতি দলটির নেতারা হেফাজতে ইসলামের আমির মাওলানা শাহ মুহিববুল্লাহ বাবুনগরীর সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ও ছারছীনা পীরের সঙ্গেও বিএনপির নেতাদের বৈঠক হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা হতে পারে। বিষয়টি আমরা লক্ষ করছি।” আরেক নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, হেফাজতের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ অরাজনৈতিক।

জামায়াতের তৎপরতা: জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ইসলামপন্থীদের ভোট ‘এক বাক্সে আনার’ চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে সাতটি দল অভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, জোট গঠনের আলোচনা চলছে এবং সময় হলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান জানান, তফসিলের পর একক প্রার্থী নিয়ে সমঝোতা চূড়ান্ত হতে পারে।

নতুন জোটের সম্ভাবনা: এদিকে এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ এবং গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দলগুলো মিলে তৃতীয় একটি জোট গঠনের আলোচনা চলছে। গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান এনসিপির সঙ্গে তাদের একীভূত হওয়ার আলোচনাকে ‘ইতিবাচক’ বলে উল্লেখ করেছেন। তবে দলটির সভাপতি নুরুল হক নুর ফেসবুকে লিখেছেন, আসন নিয়ে এখনো কোনো দলের সঙ্গে তাদের আলোচনা হয়নি।

এছাড়া বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতৃত্বে একটি বাম ধারার জোট গঠনেরও তৎপরতা চলছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, “নির্বাচন সামনে রেখে মোটা দাগে অন্তত তিনটি জোট হতে পারে। বিএনপি ও তাদের মিত্রদের একটি জোট, জামায়াতের নেতৃত্বে ইসলামি দলগুলোর একটি জোট এবং বাম ধারার দলগুলো মিলে আরেকটি জোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”