
একটি কোদালের বাজারদর ৪০০ টাকা। কিন্তু সরকারি খাতা-কলমে সেই কোদালেরই দাম যখন সাড়ে সাত হাজার টাকা হয়ে যায়, তখন বুঝতে হবে মামলা গুরুতর। কক্সবাজারের পেকুয়ায় হতদরিদ্র শ্রমিকদের জন্য সরকারি বরাদ্দে এমনই এক ‘সোনালি কোদালের’ সন্ধান মিলেছে, যার হাত ধরে প্রায় ১৫ লাখ টাকা হাওয়া হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার কেন্দ্রে রয়েছেন পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মঈনুল হোসেন চৌধুরী এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবু তাহের।
ঘটনার সূত্রপাত
হতদরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পের আওতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পেকুয়ার সাতটি ইউনিয়নের জন্য প্রায় ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। এই টাকা দিয়ে কর্মসূচিতে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য কোদাল ও ঝুড়ির মতো কাজের সরঞ্জাম কেনার কথা। কাগজপত্র অনুযায়ী, প্রায় দুই লাখ টাকার সরঞ্জাম কিনে বাকি ১৫ লাখ টাকা লোপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, পুরো উপজেলায় ১৯২টি কোদাল এবং ৮৯২টি ঝুড়ি বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী, ৪০০ টাকা দরে ১৯২টি কোদালের দাম আসে ৭৬ হাজার টাকা এবং ১৪০ টাকা দরে ৮৯২টি ঝুড়ির দাম আসে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ২ লাখ টাকা। তাহলে প্রশ্ন হলো, বাকি ১৫ লাখ টাকা গেল কোথায়?
ইউএনওর ‘অবিশ্বাস্য’ হিসাব
এই বিপুল গরমিলের বিষয়ে জানতে চাইলে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঈনুল হোসেন চৌধুরী এক অদ্ভুত হিসাব দেন। তার দাবি, প্রতিটি ঝুড়ি কেনা হয়েছে ২৮০ টাকা দরে, যাতে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বাকি প্রায় ১৪ লাখ ২৮ হাজার টাকা দিয়ে ১৯২টি কোদাল কেনা হয়েছে।
তার এই হিসাব অনুযায়ী, প্রতিটি কোদালের দাম পড়ে ৭ হাজার ৪৩৯ টাকা!
বাজারমূল্যের চেয়ে প্রায় ১৯ গুণ বেশি দামের কারণ কী? ইউএনও মঈনুল হোসেন চৌধুরীর সরল উত্তর, “সরাসরি কিনতে পারিনি; ছয়-সাত হাত বদল হয়েছে। তাই দাম বেশি হয়েছে।”
অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে সিন্ডিকেট
স্থানীয়রা জানান, এই লুটপাটের পেছনে রয়েছে ইউএনও মঈনুল হোসেন চৌধুরী ও পিআইও আবু তাহেরের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে পিআইও অফিসের দুই কর্মচারী জিয়াবুল করিম ও মো. তানভীরের নাম উঠে এসেছে, যারা যাবতীয় কাগজপত্র তৈরি ও কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পিআইও আবু তাহের প্রথমে বরাদ্দ পাওয়ার বিষয়টিই অস্বীকার করেন। পরে কাগজপত্র দেখানো হলে তিনি আর ফোন ধরেননি এবং সংবাদ প্রকাশ ঠেকানোর চেষ্টা করেন।
এদিকে, কক্সবাজারের নবাগত জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মান্নান জানিয়েছেন, অভিযোগের তথ্য যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পেকুয়ার সাধারণ মানুষ এখন সেই ব্যবস্থারই অপেক্ষায়।