
কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের মূল ভবনটি প্রায় এক দশক ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ২০১৫ সালে ভবনটি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষিত হওয়ার পর থেকে বিচার কার্যক্রম চলছে পাশের ডাক বাংলোর চারটি ভাড়া কক্ষে।
উপজেলার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই ভবনে একসময় ফৌজদারি ও দেওয়ানি উভয় মামলার বিচার চলত। কিন্তু পরিত্যক্ত ঘোষণার পর নতুন ভবন নির্মাণের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় সংকীর্ণ ও সীমাবদ্ধ পরিবেশে বিচারিক কাজ চালাতে বাধ্য হচ্ছেন বিচারক ও আইনজীবীরা।
বর্তমানে শুধু ফৌজদারি মামলার কার্যক্রম পরিচালিত হলেও জায়গার সংকট এতটাই তীব্র যে, এজলাস কক্ষে দশজন মানুষেরও ঠিকমতো দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। নথিপত্রের ভিড়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজ করতে হিমশিম খেতে হয়। বিচারপ্রার্থীদের জন্য নেই কোনো শৌচাগার বা বসার ব্যবস্থা, যা প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে।
আদালতের আইনজীবী সহকারী (এডভোকেট ক্লার্ক) নিলয় রফিক বলেন, “মামলার কারণে আদালতে প্রতিদিন প্রচুর মানুষের ভিড় থাকে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হন। বৃষ্টি হলে দুর্ভোগ আরও চরমে ওঠে।”
স্থানীয় এক সেবাপ্রার্থী আলী হোসেন অভিযোগ করেন, আদালতের কয়েকটি শৌচাগার থাকলেও সেগুলো প্রায়ই তালাবদ্ধ থাকে, যা বিচারপ্রার্থীদের জন্য চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পুরাতন ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সরকারি বরাদ্দ এলেও প্রশাসনিক শিথিলতা ও ঠিকাদারের নিষ্ক্রিয়তায় কাজ শুরু হচ্ছে না। এ কারণে দ্বীপের হাজারো মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে।
আইনজীবীরা জানান, আদালতের অবকাঠামো উন্নয়ন ও অর্থ বরাদ্দের দায়িত্ব নির্বাহী বিভাগের হাতে থাকলেও প্রশাসনিক জটিলতায় কাজের অগ্রগতি আটকে আছে। আইন মন্ত্রণালয় ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের অভাবে বছরের পর বছর ধরে প্রকল্পের কাজ স্থবির হয়ে আছে বলে তারা মনে করেন।
এ বিষয়ে সাবেক বিচারক শাহজাহান সাজু বলেন, “উচ্চপর্যায়ের পর্যবেক্ষণ ছাড়া এই অচলাবস্থা কাটানো সম্ভব নয়। বাজেটের অজুহাতে বছরের পর বছর কাজের অগ্রগতি থেমে থাকে।”
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ওমর ফারুক বলেন, “বিচার বিভাগের জন্য বাজেট বরাদ্দ মাত্র দুই শতাংশ, যা প্রশাসনিক খাতের তুলনায় নগণ্য। এই বৈষম্য একটি পুরোনো সমস্যা। জরুরি ভিত্তিতে মহেশখালী আদালত ভবনের নির্মাণকাজ শুরু না হলে দ্বীপের প্রান্তিক মানুষের বিচার প্রাপ্তির পথ আরও দুর্গম হয়ে উঠবে।”