মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫, ২০ কার্তিক ১৪৩২

সব জল্পনা থামিয়ে এনামেই আস্থা

ভালোবাসায় ভাসছেন, তবু ‘শোডাউন’ মানা
পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি | প্রকাশিতঃ ৩ নভেম্বর ২০২৫ | ১০:২০ অপরাহ্ন


অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান হলো। চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে বিএনপির কাণ্ডারি কে হচ্ছেন, সেই উত্তরের অপেক্ষায় থাকা কর্মী-সমর্থকদের মাঝে স্বস্তি এনে দিলো ৩ নভেম্বর সোমবারের সন্ধ্যা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যখন সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করছিলেন, তখন পটিয়ার অলিগলিতে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছিল চাপা উত্তেজনা। তালিকা প্রকাশের সাথে সাথেই চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য এনামুল হক এনামের নাম ঘোষিত হওয়ায় উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন তাঁর অনুসারীরা।

এনামুল হক এনাম অবশ্য পটিয়ার নির্বাচনী মাঠে নতুন মুখ নন। সবশেষ ২০১৮ সালেও তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এই আসনেই লড়েছিলেন। দীর্ঘদিনের পরিচিতি আর মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয়তা যে এবারও বৃথা যায়নি, তা কেন্দ্রীয় ঘোষণায় স্পষ্ট। খবর ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো মুহূর্তেই সরগরম হয়ে ওঠে।

জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য সৈয়দ সাদাত আহমদও তাঁর ব্যক্তিগত ফেইসবুক আইডিতে এনামুল হক এনামকে শুভেচ্ছা জানাতে ভোলেননি। এই মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে এনামুল হক এনাম ছাড়াও আরও প্রায় ৬-৮ জন নেতা ছিলেন, কিন্তু দল শেষ পর্যন্ত তাঁর ওপরই আস্থা রাখলো।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক সমীকরণ এবার অনেকটাই ভিন্ন। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় পটিয়ার ভোটের মাঠ কার্যত ফাঁকা। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির সামনে হেভিওয়েট কোনো প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। সারা দেশের মতো পটিয়াতেও বিএনপি এবং জামায়াতের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে এই চিরাচরিত রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দিতার মাঝেও এক ভিন্ন সুর বেজে উঠেছে। খোদ জামায়াতের প্রার্থী ডা. ফরিদুল আলমও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এনামুল হক এনামকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাঁর ব্যক্তিগত পেইজে। এই শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি পটিয়ার ঐক্যের কথা বলেছেন। ডা. ফরিদুল আলম লিখেন, “পটিয়া আমাদের সবার। ভিন্ন মত, ভিন্ন পথ হলেও লক্ষ্য একটাই জনগণের কল্যাণ।” তিনি সবাই মিলে “ন্যায়, শান্তি ও মানবিক পটিয়া” গড়ার আহবান জানান।

এদিকে, ভোটের মাঠে গণঅধিকার পরিষদ থেকে ডা. এমদাদুল হাসান এবং ইসলামী ফ্রন্টের এয়ার মুহাম্মদ পেয়ারুর নাম ইতোমধ্যেই ঘোষিত হয়েছে। তবে নতুন ছাত্রদের দল এনসিপির প্রার্থী কে হচ্ছেন, তা এখনও জানা যায়নি।

অন্যদিকে, এনামুল হক এনামের প্রাথমিক মনোনয়নের সুখবর পৌঁছাতেই তাঁর গ্রামের বাড়ি পটিয়া জিরি কৈয়গ্রামে জড়ো হতে শুরু করেন উৎসুক নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা। তবে এই আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মাঝেও ছিল কড়া সাংগঠনিক নির্দেশনা। সেখানে উপস্থিত হয়ে পটিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে স্পষ্ট বার্তা দেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, মনোনয়নে এনামুল হক এনামের নাম এলেও কেউ যেন কোনো আনন্দ মিছিল না করে এবং কোনো উস্কানিতে পা না দেয়।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্পষ্ট ঘোষণা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি আরও জানান, কোনো প্রকার মিষ্টি বিতরণ বা শোডাউন করা যাবে না। এই সংযত উদযাপনই বলে দিচ্ছে, বিএনপি এবার বেশ সতর্ক ও পরিকল্পিতভাবেই নির্বাচনী লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে।