সৈয়দ মো. মুজিব : ২৭ মার্চ সকাল সাড়ে ৯টা। স্থান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য কার্যালয়। সেখান থেকে অপহরণের শিকার হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মো. এমদাদুল হক।
শিক্ষাজীবনে মেধার স্বীকৃতিস্বরূপ এমদাদ পেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০১৫, বাংলাদেশ জুওলজিকাল সোসাইটি পদক-২০১৫। তার ঝুলিতে রয়েছে আরো তিনটি আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্র। আবিষ্কার করেছেন দুটি নতুন প্রজাতির মাছের রোগজীবাণু। তাহলে বুঝে নিন কেমন মেধাবী ছিল এই এমদাদুল হক।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিণতি সেই দিন তিনি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ভাইভা বোর্ডে বসতে পারেনি একদল চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের লালসার শিকার হয়ে।
খোজ নিয়ে দেখা গেছে, অপহরণকারীদের সাথে এমদাদের ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক কোনো শত্রুতা ছিল না। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে কেনই বা তার মত একজন মেধাবীকে পরীক্ষা দিতে না দিয়ে অপহরণের পর মারধর করে পুলিশে দেওয়া হল?
খবরের পিছনের খবর খুঁজতে গিয়ে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তা হল- কয়েকজন নিয়োগপ্রার্থী এবং সেই বিভাগের একজন শিক্ষকের ইন্ধনে তাকে অপহরণ করা হয়েছিল। যাতে এমদাদ ভাইভা বোর্ড ফেস করতে না পারে। আর তা সম্ভব হলে খুলে যাবে তাদের পছন্দের প্রার্থীর পথ।
দুষ্কৃতকারীরা অপহরণ করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা নিরীহ মেধাবী এই শিক্ষার্থীর উপর লাগিয়ে দিয়েছিল শিবির-তকমা। অথচ ছাত্রজীবনে এমদাদ শিবির করেছে এমন তথ্য কেউ দিতে পারেনি।
এখন প্রশ্ন হল- তাহলে কি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা একশ্রেণীর লুটেরাদের হাতে জিম্মি হয়ে যাচ্ছে? এমদাদের মত মেধাবীদের মূল্যায়ন নেই এই সমাজে? আরেকটি বিষয় আমাদের ভাবিয়ে তুলছে তা হল- একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয় কি সন্ত্রাসীদের হাতে নিরাপদ নয়? এমদাদকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব তো এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। তারা কি সেই দায়িত্ব পালন করেছে?এভাবে একজন দেশসেরা মেধাবীর স্বপ্নের অপমৃত্যুর জন্য তারাও সমান দায়ী।
এভাবে চলতে থাকলে এমদাদদের মত মেধাবী আর এগিয়ে আসবেন না শিক্ষকতা পেশায়। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা হারাবে তার গতি। মেধাবী এমদাদকে অপহরণ করে অন্যজনের শিক্ষক হওয়ার পথ প্রশস্ত করতে যে বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে তার কলঙ্ক চবি প্রশাসনকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে।
এই ঘটনায় ভুক্তভোগী এমদাদ আদালতে মামলা করেছেন। ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। আদৌ কে এমদাদ বিচার পাবে সেটা এখন সচেতন মহল প্রশ্ন?
একুশে/এসএম/এটি